অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ‘লেডি ডন’ খ্যাত শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের সময় এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল।
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় আজ যুক্তিতর্কের দিন ধার্য ছিল। পাপিয়া ও তার স্বামীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।’
তাপস কুমার পাল বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পাপিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্ততর্ক শেষ না হওয়ায় বিচারক আগামী রবিবার অবশিষ্ট যুক্তিতর্কের দিন নির্ধারণ করেছেন।’
এর আগে গেল ৯ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় একই আদালত পাপিয়া-সুমন দম্পতি আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দফতরের দায়িত্বরত এসআই আরিফুজ্জামানের সাক্ষ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
এর আগে গত ৩১ আগস্ট এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেন র্যাবের উপপরিদর্শক সাইফুল আলম। এর পরদিন ১ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী র্যাবের ডিএডি শফিকুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। ২ সেপ্টেম্বর একদিনেই ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তারা হলেন- পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন মিয়া, সিপাহী আলেয়া খাতুন, ফারুক হোসেন, দীপ্ত দাস ও জীবনচন্দ্র।
সবশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর আরও ৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এই ৩ জন হলেন- মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুজ্জামান, সুধাংশু সরকার, মো. সাইরুল ইসলাম।
গত ২৩ আগস্ট চার্জ গঠনের মধ্যে দিয়ে পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। ওইদিনই চার্জ গঠন করে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ।
এর আগে গেল ২৯ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র আইনে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রাপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ১২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
গেল ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।
গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, নগদ ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারের পর ওইদিন (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতেই পাপিয়ার নরসিংদীর বাসায় এবং পর দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অভিযান চালায় র্যাব।
ওইসময়ই ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের শওশন’স ডমিনো রিলিভো নামক বিলাসহুল ভবনে পাপিয়াদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে পুলিশের এলিট ফোর্সের সদস্যরা।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান র্যাব গ্রেফতার করার পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি, অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করা হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অবৈধ ৫ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে পাপিয়া ও তার সহযোগীদের মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে। একইসময়ে দুদকও তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে। গ্রেফতারের পরপরই পাপিয়াকে নরসিংদী যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেফতার পাপিয়া ও তার সহযোগীরা এখন কারাগারে আছেন।
গ্রেফতারের আগে গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ভাড়া নিয়ে মাসে কোটি টাকা বিল গুনতেন যুবলীগের এই নেত্রী (পরে বহিষ্কৃত)। দিনরাত সঙ্গে থাকত ৭ জন অল্পবয়সী তরুণী। আর তার মঞ্জিলে আনাগোনা ছিল সমাজের নানা পর্যায়ের এলিট মানুষের।
অস্ত্র আইনে পাপিয়া দম্পতির বিচারকাজ শুরু হলেও অপর তিনটি মামলার তদন্তকাজ এখনও শেষ হয়নি বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন