ওয়াসার এমডি তাসকিন এ খান এর চাকরির মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদ। গতকাল অনুষ্ঠিত পরিচালনা সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তাসকিন এ খানের চাকরির মেয়াদ আর তিন বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এটি যদি করা হয়, তবে তৃতীয় বারের মত তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে টানা ওয়াসার এম ডি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। দফায় দফায় তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওয়াসার এমডি হিসেবে তিনি সফল, না ব্যর্থ- সেটি অন্য প্রশ্ন। কিন্তু একজন সরকারি কর্মকর্তার এই ধরনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি নজিরবিহীন, বলে মনে করছেন বিভিন্ন মহল।
কিন্তু তারপরও ওয়াসার এমডি তাসকিন এ খান এর চাকরির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ালে, তিনি ১৪ বছর তিনি ওয়াসা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওয়াসা এবং তাসকিন এ খান যেন একে অন্যের পরিপূরক হিসেবেই এখন প্রতীয়মান হচ্ছেন। তবে শুধু তাসকিন এ খান একা না, ওয়াসার এমডি ছাড়াও আরও কিছু ‘সৌভাগ্যবান কর্মকর্তা’ রয়েছেন, যারা এই সময়ে যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবেই সরকারি কাজ করছেন। বারবার চুক্তি নবায়ন করে তাদেরকে দায়িত্বে রাখা হচ্ছে। তাসকিন খান ছাড়াও যারা উল্লেখযোগ্য তারা হলেনঃ
১। শহীদ উল্লা খন্দকার
শহীদ উল্লা খন্দকার গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব হিসেবে দ্বিতীয় দফায় চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ২০১৬’র ১৫ মার্চ তিনি গৃহায়ন সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর দুই দফায় তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আবার তৃতীয় দফায় তার চাকুরির মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা- সেটি নিয়ে নিশ্চিত জানা যায়নি। তিনি রেকর্ড সংখ্যক সময়ে গৃহায়ন ও পূর্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
২। পবন চৌধুরী
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পবন চৌধুরী। তিনি ২০১৪ ‘র ৩০ জুন এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ ‘র ২৮ জুন তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর তাকে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। এরপর আবার তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এখনো কাজ করছেন। বেজা’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি কতটা অপরিহার্য, তার বিকল্প আছে কি নাই- সে বিতর্ক অন্যতম। কিন্তু তিনি যেন একটি চিরস্থায়ী সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন।
এ রকম পদস্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাই শুধু নয়, অনেক মধ্যম মানের কর্মকর্তারাও দিনের দিনের পর দিন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন এবং চাকরি করছেন। এদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এর উপদেষ্টা সামন্ত লাল নানা অবয়বে, নানা পরিচয়ে সরকারি চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তারও দুই দফা চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করার পর, তিনি এখন চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। আরও কতদিন তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে সেটি কেউই বলতে পারে না।
বাংলাদেশ নিউরো সাইন্স ইন্সটিটিউট এর প্রধান কাজী দীন মোহাম্মদ, যিনি একজন বিশিষ্ট নিউরো সার্জন তিনিও কয়েক দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে এখনো এই ইন্সটিটিউটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ রকম আরও কিছু কর্মকর্তা আছেন, যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। একবার চুক্তি শেষ হলে, আবার চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে, বুদ্ধিভিত্তিক নিয়োগের বিপক্ষে। বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং অবসরের পর কারো চাকরি যেন নবায়ন না করা হয় সে ব্যাপারে দাবি করা হয়েছিল।
কারণ এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে পদন্নোতি বঞ্চিত হন অনেকে, অনেকেরই ক্যারিয়ার বিপন্ন হয়। আর এই কারণেই সর্বমহল থেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় যে, কিছু কিছু ব্যক্তি দিনের পর দিন একই পদে অপরিহার্য হয়ে উঠে। এরা সরকারের জন্য কতটা অপরিহার্য- এই প্রশ্ন করেন অনেকেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন