যমুনায় পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। গত তিনদিনে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৭৩ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুর পয়েন্টে বেড়েছে ৬৩ সেন্টিমিটার।
দ্রুতগতিতে যমুনার পানি বাড়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে সদর উপজেলার পাঁচ ঠাকুরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার শুরু থেকেই এ অঞ্চলে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সিমলা এলাকায় পাউবোর স্পার বাঁধটি নদীতে বিলীন হওয়ার ফলে নদীভাঙন অব্যাহত ছিল। গত কয়েকদিন ধরে দ্রুতগতিতে যমুনায় পানি বাড়ার ফলে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে।
কথা হয় আব্দুর রাজ্জাক, মিলন শিকদার, সোহেলসহ স্থানীয় অনেকের সঙ্গে। তারা বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই বেড়েছে ভাঙন। শনিবার সকালে বাঁধের মাথায় থাকা জামে মসজিদটিও সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তারা আরও বলেন, এর আগে সিমলা ক্রসবারটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পরও এ এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এর আগে ২৪-২৫ জুলাই ভয়াবহ ভাঙনে ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত মানুষগুলো এখনো বাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে বালিভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করে আসছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই ভাঙন থামানো যাচ্ছে না। ভাঙনের মুখে থাকা মানুষগুলো ধীরে ধীরে তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে।
ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, যেভাবে ভাঙন চলছে তাতে আতঙ্কে মধ্যে রয়েছে পাঁচ ঠাকুরী, ভাটপিয়ার, পার পাচিলসহ কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। ইতোমধ্যে নদীভাঙনে এ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আড়াইশোর উপরে মানুষ ঘরবাড়ি সরিয়ে বাঁধের উপর কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
পাউবো সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরেই যমুনায় পানি বাড়ছে। গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজিপুর পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সিমলা স্পার দেবে যাওয়ার পর থেকেই এ অঞ্চলে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি হ্রাস কিংবা বৃদ্ধি সময় ভাঙনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। আমরা জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ডাম্পিং করছি। পাঁচ ঠাকুরি জামে মসজিদটি রক্ষায় আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ এলাকায় নদীর গভীরতা এতো বেশি যেকোনো কিছুতেই ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। এ কারণে মসজিদটিও নদীগর্ভে চলে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করে এ অঞ্চলের মানুষকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানো যাবে।
তিনি আরও বলেন, গত তিন-চারদিন ধরে দ্রুতগতিতে পানি বাড়লেও শনিবার থেকে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। রোববার থেকে পানি কমতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন