টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নে অবস্থিত লোহানী গ্রাম। উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এ গ্রামেই অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করা সাগরদিঘী নামে এক ঐতিহাসিক দিঘী। বুকভরা গভীর জল নিয়ে পাল বংশের শাসনামলের নানা ঐতিহ্য ও কিংবদন্তি নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিঘীটি।
পাল শাসনামলের ঐতিহ্য বহন করা পর্যটন সম্ভাবনাময় সাগরদিঘীর সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। দুই পাড় দখল করে বসত বাড়ি নির্মাণ, দোকান ও মুরগির খামার স্থাপন করে দীঘির পাড় দখল করে সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে।
অপরদিকে মাছ চাষের কারণে মাছের খাবার হিসেবে দিঘীর পানিতে মুরগির বিষ্ঠা, খামারের উচ্ছিস্ট অংশ দিঘীর পানিতে ফেলায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, কিছু কাল আগেও সাগরদিঘীর পরিবেশ আজকের মতো এতটা করুণ ছিলোনা। দিঘীর এমন জরাজীর্ণ দশা হবার আগে দিঘীর পানি খাবারের, গোসল ও আনুসঙ্গিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো। ভ্রমণ পিপাসুরা দিঘীর কোল ঘেঁষে প্রকৃতির নয়নাভিরাম শোভা প্রাণ ভরে উপলব্ধি করতেন। শীতের মৌসুমে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকতো গোটা দিঘী। কিছু কাল আগেও সবুজে সবুজে ভরপুর ছিল যে পাড়সমূহ আজ তা বে-দখল হয়ে গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে আর ক্রমবর্ধমান জনসবসিতর চাপে দিঘীর উত্তর পাড়ে সাগরদিঘী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দক্ষিণ পাড়ে সাগরদিঘী দাখিল মাদ্রাসা।পূর্ব পাড়ে সাগরদিঘী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং পশ্চিম পাড়ে রয়েছে এলজিইডির অস্থায়ী বাংলো
এদিকে দীঘির সকল পাশের পাড় দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট বড় ২০টির মত মুরগীর খামার। এর মধ্যে ব্যবসায়ী খোকন মিয়ার রয়েছে এক ডজনেরও বেশি মুরগিরর খামারের ঘর। এ ছাড়া লুৎফর মিয়াসহ আরো অনেকে পাড় দখল করে মুরগিরর খামার করেছেন। আর এসব মুরগির খামারের বর্জ সরাসরি ফেলা হচ্ছে দিঘীর স্বচ্ছ পানিতে। এর ফলে পানি কালো হয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল স্থানীয় প্রশাসনের কাজ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করায় পাহাড়ি এলাকার একমাত্র জলাধার দিঘীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দিঘীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে দীঘির বিভিন্ন পাড় দখল করে ৩০টির বেশি বসত বাড়ি এবং ১০টির মত দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ার দীঘির পাড় নানা ভাবে দখল হয়েছে।
দিঘীটি লিজ দেওয়ায় মাছ চাষিরা মাছের খাদ্য হিসেবে দিঘীতে মুরগির বিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করে। যার প্রভাবে দিঘীর প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে দিঘীর তলদেশ। এসব কারণে দিঘীর পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিঘীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বিশুদ্ধ বাতাস আর প্রশান্তির নিঃশাস নেয়ার কোন উপায় নেই। দিঘীর পাড় ঘেষে চলতে হয় মুখে রুমাল দিয়ে না হয় নাক বন্ধ করে। পাড়গুলো শুধু দখলই হয়নি বরং কোন কোন স্থান কেটে, গর্ত আর বিকৃত করে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের কি অসীম শক্তি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই দিঘীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখল মুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ‘প্রাচীন আমলের এই দিঘীকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন