স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে এবার মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৯ লাখ টাকার ডকুমেন্টের স্ট্যাম্প গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে স্ট্যাম্পটি উদ্ধারের জন্য লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শাহানাজ বেগম নামে এক ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগী শাহানাজ বেগম লালমনিরহাট শহরের বিডিআরগেট খোচাবাড়ি এলাকার নবীয়ার হোসেনের স্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা সাজাহান আলীর (সনদ নং ১৮৩০১৬) মেয়ে। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের রানিং বেয়ারা পদে কর্মরত আছেন।
এর আগে লালমনিরহাট সদর থানা ওসি মাহফুজ আলম নিজ অফিস কক্ষে বসে হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এ নিয়ে “হাত জীবাণুমুক্ত করে ঘুষ নেন ওসি মাহফুজ” শিরোনামে একটি সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিডিওসহ ফলাও করে প্রকাশ হয়। ফলে ওসি'র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এমনই একজন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম বিচার চেয়ে পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, রেলওয়েতে চাকরির সুবাদে শাহানাজ বেগমের সাথে পরিচয় হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের বাহাদুরাবাদ ঘাটের লস্কার তৈয়াবুর রহমান টিপুর। এরই সুবাদে তৈয়াবুর রহমান টিপু শাহানাজের ছেলে সোহানুর রহমান মিমকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে দেয়ার কথা বলে কয়েক দফায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নেন। টাকার প্রমান স্বরুপ গত ২০১৫ সালের ১০ মে তারিখে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করেন তৈয়াবুর রহমান টিপু। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও চাকরি দিতে ব্যার্থ হলে সমুলে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তৈয়াবুর রহমান। সেই টাকা আজ কাল বলে কালবিলম্ব করায় স্ট্যাম্পমুলে মামলার প্রস্তুতি নেন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বেগম।
বিষয়টি বুঝতে পেয়ে চাকরিদাতা তৈয়াবুর রহমান সদর থানা ওসি মাহফুজ আলম ও সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে গত ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে শাহানাজের বাড়িতে আসেন। এ সময় আপস মিমাংসার কথা বলে সাড়ে ৯ লাখ টাকা প্রমানের চুক্তিনামার স্ট্যাম্পটি খোদ ওসি মাহফুজ আলম হাতিয়ে নেন এবং তার স্বামী ও ছেলেকে থানায় নিয়ে আসেন বলে ভুক্তভোগি শাহানাজের অভিযোগ। পরদিন শাহানাজের স্বামী ও ছেলেকে মামলায় জেলে পাঠানোর হুমকী দিয়ে আপস মিমাংসার কাগজে একটি এবং সাদা কাগজে একটি স্বাক্ষর নেন ওসি মাহফুজ আলম। এ বিষয়টি অন্য কাউকে জানালে পুনরায় স্বামী ও ছেলেকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর হুমকী দেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শাহানাজ বেগম।
ওসি মাহফুজ আলমের হাতে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকার চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্প উদ্ধারপুর্বক চাকুরীদাতা প্রতারক তৈয়াবুর রহমানের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন শাহানাজ বেগম।
শাহানাজ বেগম বলেন, এক সঙ্গে চাকরির সুবাধে পরিচয় হলে তৈয়াবুর আমার ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিতে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নেন। তৈয়াবুরের মোটা অংকের টাকার জোড়ে ওসি মাহফুজ আমার বাড়িতে এসে ডয়ার ভেঙ্গে স্ট্যাম্পগুলোসহ ছেলে ও স্বামীকে ধরে নিয়ে যান। টাকা ছাড়াই আপসের কাগজে স্বাক্ষর করে ছেলে ও স্বামীকে ছাড়িয়ে আনি। তাদেরকে ছাড়তেও ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। দীর্ঘ দিন পরে হলেও বর্তমান এসপি ভাল মানুষ তাই তার কাছে বিচার চেয়েছি।
এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ওসি মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা বলেন, অভিযোগ তো আজকেই দিয়েছেন। আমার হাতে পৌছুক। তারপরে দেখা যাবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন