১২০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১৫০ টাকা। করোনার আগে ছিল মাত্র ৮০ টাকা।৬০ শতাংশ বাড়ালেও হয় ১২০ টাকা। সেখানে বাড়তি নিচ্ছে ৩০ টাকা। খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পরিবহনে রীতিমতো চলছে ভাড়া ডাকাতির মহোৎসব। প্রতিবাদ করে উল্টো পরিবহন শ্রমিকরা নাজেহাল করছেন যাত্রীদের।
কথাগুলো বুধবার (১২ আগস্ট) সকালে ক্ষোভ আর আক্ষেপের সঙ্গে বলছিলেন এ সড়কের নিয়মিত যাত্রী খুলনার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা জোবায়ের মাহফুজ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই পরিবহনে। পাশের সিটও খালি রাখা হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের অভিযান চলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে এই অরাজকতা চলছে। যে কারণে বাড়ি থেকে অফিসে আসা-যাওয়া করতেই বেতনের সিংহভাগ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
আমরা তরুণ উদ্যোক্তা গ্রুপের অ্যাডমিন ও খাসা-অর্গ্যানিক পণ্যের মালিক হেলাল হোসেন বলেন, করোনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার গণপরিবহণে যাত্রী কমিয়ে ভাড়া বাড়ায়। কিন্তু যাত্রীরা এর কোনো সুফল পাচ্ছি না। পাইকগাছা, সাতক্ষীরা থেকে খুলনাগামী সব বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করলেও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বাস কর্তৃপক্ষ। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে নাজেহাল করছে বাসশ্রমিকরা।
‘এখন স্বল্প দূরত্বে লোকাল কোনো যাত্রীকে বাসে উঠতে দেওয়া হয় না। এজন্য বৃষ্টি মৌসুমে যাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন। বাসে এমন জঘন্য ব্যবহারের কারণে মহাসড়কে ছোট যানবহনের চাহিদা বেড়েছে। ফলে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে প্রতিদিন বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। যাত্রীরা সম্মান নিয়ে নিরাপদে আগের ভাড়ায় যাতায়াত করতে চাই। ’
...সামসুল আরেফিন রাসেল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, পরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের শেষ নেই। যানবাহন মালিকরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। বিশেষ করে মাহেন্দ্র চালক সিন্ডিকেটের কাছে খুলনা শহরের মানুষ জিম্মি। মাহেন্দ্রওয়ালারা ভাড়া ২/২.৫ গুণ করেছে কিন্তু যাত্রী ঠিকই ৬ জন নিচ্ছে। তারা সিন্ডিকেট করে এটা করছে। রিজার্ভ যেতে চাইলেও দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছে। এ বিষয়ে প্রশসনকে অবহিত করার পর মহানগরীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও গণপরিবহণে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। কিন্তু তারপরও ভাড়া নৈরজ্য কমেনি।
যাত্রীরা অভিযোগ করেন- ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বিআরটিসি পর্যন্ত নেমেছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতায়। দুই আসনেই যাত্রী পরিবহনসহ ৬০ থেকে প্রায় শতভাগ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে আন্তঃজেলার বিভিন্ন পরিবহন। সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে এই অরাজকতা চলছে ঈদুল আজহার পর থেকেই। মাঝে মধ্যে যাত্রার মাঝপথে বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। খুলনা- বাগেরহাট সড়কেও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। খুলনা থেকে কয়রা রুটে প্রতি সিটে লোক নেয়। আবার টাকাও বেশি নিচ্ছে। খুলনা-চালনা রুটে বাসে একজনের কাছ থেকে দুই সিটে ভাড়া নেওয়া হয়, কিন্তু বসানো হয় সেই দু’জন।
আরও পড়ুন>>>আসন ফাঁকা নেই, তবুও বাড়তি ভাড়া আদায় গণপরিবহনে
রূপসা বিআরটিসি বাসে কোনো নিয়মই মানা হয় না। প্রতি দুই সিটে এক যাত্রী থাকার কথা থাকলেও সব সিটে যাত্রী, না আছে মাস্ক, না মানছে কোনো স্বাস্থ্যবিধি। শর্ত ছিল প্রতিটি বাসে যাত্রী সুরক্ষায় বারবার স্যানিটাইজ করে দূষণমুক্ত করা, চালকসহ হেলপারের মাস্ক বাধ্যতামূলক, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালানো, যাত্রীর গায়ের তাপমাত্রা মাপা, নতুন ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন প্রভৃতি। এগুলোর সবকিছু শিথিল হয়ে গেছে। নিয়ম বা নির্দেশনা যা আছে সবই কাগজে কলমে।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবহনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে নামমাত্র। মোবাইল কোর্ট বা সরকারি নজরদারি বাড়ানো হলে পরিবহন সেক্টরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
..খুলনা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বাংলানিউজকে বলেন, ভাড়া নৈরজ্যে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে গরিব মানুষকে জিম্মি করা কোনোভাবেই বাড়তি ভাড়া আদায় মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। শ্রমিকরা এ বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিজেরই নিয়ে যাচ্ছে। এটা মালিক কিংবা মালিক সমিতি জানে না। শ্রমিকরা নিয়মিত নির্ধারিত ক্যাশও জমা দেয় না। পরিবহণে যাত্রী হয় না বলে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদুল ইসলাম তমাল বাংলানিউজকে বলেন, ভাড়া নৈরজ্য বন্ধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য পরিবহনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এটা আরও জোরদার করা হবে। বিভিন্ন গণপরিবহণে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না এবং সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে মেসেঞ্জারে জেলা প্রশাসকের কাছে যাত্রী সাধারণের পক্ষে এমন অভিযোগ এলে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ১০ আগস্ট মহাগরীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও গণপরিবহণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এসময় এ ধরনের অপরাধ করার দায়ে কিছু পরিবহন মালিককেও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন