ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নে করোনায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনার নগদ অর্থ সহায়তার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় স্থানীয়রা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ইউএনও বলছেন, এই ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে শুধুমাত্র আখিতারা নামে একটি গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর নগদ প্রণোদনার ২৫০০ টাকার সুবিধাভোগীর তালিকায় চেয়ারম্যানের ভাই, ভাতিজা, ভাগিনাসহ অর্ধশতাধিক নিকটাত্মীয়। তারা কেউ পাকা বাড়িওয়ালা, ১০-১৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক, কেউ প্রবাসী ও স্বচ্ছল ব্যবসায়ী।
এছাড়া চেয়ারম্যানের আত্মীয়তার সুবাদে স্বামী-স্ত্রীর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের নামও রয়েছে তালিকায়।
নোয়াগাঁও ইউনিয়নে ১১০০ জন সুবিধাভোগীর নাম চূড়ান্ত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এই তালিকায় ৯টি ওয়ার্ডে সমহারে বণ্টন না করে, চেয়ারম্যান অর্ধশতাধিক নিকট আত্মীয়সহ, নিজ ওয়ার্ডের আঁখিতারা গ্রামে বরাদ্দ দিয়েছেন ২৬০ জনের।
আবার উপকারভোগীর নাম ঠিকানা থাকলেও মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে অন্য ব্যক্তির। স্থানীয় আঁখিতারা গ্রামের (৪নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ডে ২৬০ জনের নাম ২৫০০ টাকা প্রণোদনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৪০ জনের নাম আমি দিয়েছি। বাকি ২২০ জনের নাম চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী দিয়েছেন। তিনি তার বংশের নিকটাত্মীয়দের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য পায়েল হোসেন মৃধা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী স্বজন প্রীতির কারণে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বহু প্রকৃত দুস্থ ও অসচ্ছল মানুষ এই প্রণোদনা তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন। যা খুবই দুঃখজনক।
অভিযোগের ব্যাপারে নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী জানান, যেহেতু আমার বাড়ি এই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে, সে কারণে এখানে সরকারি নানা বরাদ্দ কিছু বেশিই দিতে হয়। কারণ এই ওয়ার্ডের দুস্থ মানুষেরা আমাকেই কাছে পায় এবং বিরক্ত করে।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজল আরও বলেন, আমার গোষ্ঠী-বংশে প্রায় সাড়ে চারশ ভোটার। তাদের মধ্যে অনেকেই গরীব। আমি নিয়ম মেনেই আমার গোষ্ঠীর গরীব ৩০-৩৫ জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন ২৫০০ টাকা করে পেয়েছে। বাকিদের মোবাইল নাম্বার সংশোধন করে দেয়া হয়েছে, অচিরেই তারা টাকা পেয়ে যাবে।
এই ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম মোসা সাংবাদিকদের জানান, নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীর বিরুদ্ধে এলাকার কিছু দুস্থ মানুষের দায়ের করা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই ঘটনায় দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য এই প্রণোদনা, সেটা নিয়ে তালিকায় কোনো প্রকার হেরফের মেনে নেয়া হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন