করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। দেশে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। মাসের পর মাস আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও থমকে গেছে। সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে মন্দার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি খাতেও।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে গত অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার। অবশ্য ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতিও হচ্ছে। মে মাসের তুলনায় জুনে রফতানি বেড়েছে।
একইসময়ে বিশ্ববাজারে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভসের মতো সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। আগে একচেটিয়াভাবে এসব পণ্যের বাজার চীনের দখলে থাকলেও আমদানিকারকরা চীনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সামনে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি এসব পণ্য রফতানির বিশাল সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজিএমইএ জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি খাতে মোট রফতানি ছিল প্রায় ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা নেমে আসে ২ হাজার ৭৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। এ হিসাবে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ রফতানি কমেছে।
বিজিএমইএ জানিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার। সে অনুযায়ী রফতানিও হচ্ছিল। কিন্তু করোনা মহমারির কারণে হিসাবের গণেশ উল্টে যায়। বিশেষত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) খাদ্যপণ্য ও জরুরি ওষুধ ছাড়া অন্য সব খাতে ভোগ ব্যয় একেবারেই তলানিতে নেমে আসে। তাতে করে ভয়াবহ দুরবস্থার মুখে পড়ে পোশাক খাত।
এরইমধ্যে বেশ কিছু বড় বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এবং বাকি ব্র্যান্ডগুলো টিকে থাকতে দোকানপাট বন্ধ রাখে। এতে করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক ধারা শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু এপ্রিল মাসেই গত অর্থবছরের তুলনায় রফতানি কমে ২২০ কোটি ডলারের মতো। গত এপ্রিলে যেখানে রফতানি হয়েছিল ২৫৪ কোটি ডলারের পণ্য, সেখানে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের এপ্রিলে রফতানি হয় মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পণ্য।
তবে এ মুহূর্তে কিছুটা আশার কথা হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন তুলে দেয়ায় পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তাই পোশাক রফতানিও আগের মাসগুলোর তুলনায় জুন মাস থেকে কিছুটা বেড়েছে। মে মাসের শেষ দিক থেকেই রফতানিতে উন্নতি শুরু হয়। গত মে মাসে মোট রফতানি হয়েছে ১২৩ কোটি ডলারের পণ্য আর জুনে তা ২১২ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় সোয়া ৩০০ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। আর এসব কারণেই তুলনামূলকভাবে মাঝারি ও কম পুঁজির বেশ কিছু পোশাক কারখানা গত কয়েক মাসে বন্ধ হয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী দিনগুলোতে আরও কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখছে বিজিএমইএ।
এদিকে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা মনে করছেন, এখনই পোশাকের বৈশ্বিক বেচাবিক্রির পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে পুনরুদ্ধার হবে না। ইউরোপের অনেক দেশে এখনও লকডাউন চলছে। সেসব দেশ নিজেদের অর্থনীতি সচল করতে লড়াই করছে। জুড়ে যেসব পণ্য রফতানি হয়েছে সেগুলো আগের অর্ডার। নতুন করে কেউ অর্ডার দিচ্ছে না। দিলেও আগের তুলনায় পরিমাণে অন্তত ৪০ শতাংশ কম। কারণ বাজারে চাহিদা কমেছে। মানুষের ক্রয় সক্ষমতাও নিম্নমুখী। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক খাত সামনের দিনগুলোতে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলেও শঙ্কা গার্মেন্ট মালিকদের চোখেমুখে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন