কক্সবাজারের টেকনাফে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৬ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ রবিবার (২ আগস্ট) তাদের প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার আদেশ দেয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলীকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন— কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রদিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের গুলিতে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। একারণে পুলিশ সদর দফতর থেকে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশসদস্যসহ বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের সব সদস্যকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ একজন এসআই, একজন এএসআই এবং ১৩ জন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশের দাবি, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে একসঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।
পুলিশ বলছে, পুলিশ গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, কিছু গাঁজা ও দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ নিহত সেনা কর্মকর্তার পিস্তলটি জব্দ করেছে।
জানা গেছে, একটি তথ্যচিত্র ধারণের কাজে আরও চার জন সঙ্গীসহ একমাস ধরে হিমছড়ির নীলিমা রেস্টহাউজে অবস্থান করছিলেন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। তিনি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ট্রাভেল শো ‘জাস্ট গো’ নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করছিলেন। ঘটনার দিন তারা বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় রাতে ভিডিও করার জন্য একটি পাহাড় দেখতে আসেন। লাইটের আলো দিয়ে পাহাড় দেখার সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ডাকাত ভেবে পুলিশে খবর দেয়। এই পরিস্থিতিতে মেজর সিনহা ও সিফাত পাহাড় থেকে নেমে রিসোর্টে ফিরে যাবার জন্য রওয়ানা দেয়। পথে বিজিবির চেকপোস্টে পরিচয় দিয়ে চলে আসলেও পুলিশের চেকপোস্টে তাদের গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে কথা কাটাকাটি হয়। এরই এক পর্যায়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক লিয়াকত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন