সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কোরবানির ঈদ ও শোকাবহ আগস্ট ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, মোড়ে মোড়ে বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট ও টহল।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও গাড়ি তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি।
শনিবার (১ আগস্ট) ঈদের দিন সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
পুলিশ বলছে, কোরবানির ঈদ ও শোকাবহ আগস্ট সামনে রেখে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণেই রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ সদরদফতর বলছে, প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর ঈদের জামাতকে ঘিরে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের ছুটিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে রাজধানীতে মোবাইল পেট্রল, ফুট পেট্রল ও চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে পুলিশ ও র্যাব।
পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘যদিও করোনা সংক্রমণরোধে এবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারে নাগরিকদের আমরা নিরুৎসাহিত করছি, তারপরও বরাবরের মতো এবারও হয়তো কেউ কেউ শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতে পারেন। এ সময়ে শহরের বাসাবাড়ি ফাঁকা পেয়ে চুরি-ডাকাতি যাতে বেড়ে না যায় তার জন্য নগর পুলিশের সবকটি ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও পোশাকে টহল পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রেখে নগরের প্রতিটি এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। সকল বিষয় মাথায় রেখে পুলিশের সকল ইউনিটের সদস্য সবখানে কঠোর নজরদারি রাখছে।’
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘করোনা মূহুর্তে কিংবা লকডাউনের সময় জাতিসংঘের মহাসচিবও যে আশঙ্কা করেছিলেন জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে আমরাও তেমনটিই দেখছি। এটা জাতিসংঘের মহাসচিবের একটা বক্তব্য ছিল। আমরা দেখেছি এই সময়টাতে জঙ্গিদের যারা বিশ্বাস করে বা যারা লালন পালন করে তারস এই সময়টাতে ইন্টারনেটে জঙ্গিবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেছি।’
তিনি বলেন, ‘ঈদে পুলিশ, র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরা মনে করি জঙ্গিরা এই ধরনের অকেশন অনুষ্ঠান) গুলোতে কোনও ঘটনা ঘটাতে না পারে, যদিও তাদের নেটওয়ার্ক বা সাংগঠনিক অবস্থার সে অবস্থায় নেই। তারপরেও বিচ্ছিন্নভাবে যাতে কেউ কোনও ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্যই আমরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষকে এই মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে তবে কোনো হুমকি নেই। এইটা কে সামনে রেখে আমরা সদা তৎপর আছি। ঈদ একটি বড় উৎসব ঈদকে সামনে রেখে আমরা দেশের প্রতিটি জায়গায় চেকপোস্ট বসে আছি পাশাপাশি ঢাকা শহর ও ঢাকা শহরের বাই প্রায় প্রতিটি হাটেই আমরা অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছি। অস্থায়ী ক্যাম্পের লক্ষ্য মূলত চারটি। এরমধ্যে প্রথমটি হলো হাটে জাল টাকা রোধ করা। দ্বিতীয়তঃ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা। তৃতীয়ত যেকোনো ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকলে সেটাকে মোকাবেলা করা এবং চতুর্থ হলো সর্বোপরি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নজরদারি করা। এই চারটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গরুর হাট কেন্দ্রিক আমরা অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে যেটি আমাদের ঈদের পরেও তিন দিন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘মহাসড়কগুলোতেও চেকপোস্ট বসিয়েছি, চেকপোস্টের পাশাপাশি আমরা অনলাইনেও সতর্ক আছি যেন কেউ গুজব ছড়াতে না পারে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় আপনারা ভীত না হয়ে আনন্দ মুখর হয়ে ঈদকে উদযাপন করবেন। এছাড়াও র্যাব যেকোনও হামলা মোকাবেলা করার জন্য পূর্বের যেকোনও সময়ের চেয়েও আরো বেশি সক্ষম।’
নিরাপত্তার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঈদের সময় বাসাবাড়ি, ব্যাংক-মার্কেটসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বিষয়ে বিশেষ বিশেষ এলাকায় র্যাবের নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে। ছুটির সময় র্যাবের উপস্থিতি দৃশ্যমান থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘যানবাহনের নিরাপত্তায় আমরা তল্লাশি চালাচ্ছি। ঢাকামুখী পশুবহনকারী গাড়িতে চাঁদাবাজি রুখতে র্যাবের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সড়কে-মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য র্যাবের টহল পরিচালিত হচ্ছে। হাটে ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তারা কোনো সমস্যার কথা বলেননি। এরপরও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা বিষয়টি দেখব।’
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি পুলিশ সদরদফতরের একটি চিঠিতে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করা হয়। চিঠিতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এর কয়েকদিন পরই পল্লবী থানার ভেতর আসামির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়। এছাড়াও সামনে ১৫ আগস্ট। সবকিছু মিলে এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটু কঠোর করা হয়েছে।
তবে গত বুধবার জঙ্গী হামলার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আমি সব সময়ই বলেছি, জঙ্গি আমরা কন্ট্রোলে এনেছি, কিন্তু একদম সমূলে উৎপাটন করতে পারিনি। ছোট ছোট স্লিপিং সেল এখনও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। সেগুলোর কার্যকারিতা তেমন কিছু নেই।
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অত্যন্ত প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করেছে। আজকে সেজন্য জঙ্গি বলুন, সন্ত্রাস বলুন, এগুলো থেকে দেশ রেহাই পেয়েছে। কোরবানির ঈদ ও অগাস্ট মাস সামনে রেখে দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশের সকল ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা যেটা শুনেছেন, মাঝে মাঝে গোয়েন্দারা জানাচ্ছে। সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনী যা যা পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেগুলো করছে। পুলিশ, র্যাব সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সব সময় তারা (জঙ্গি) চিন্তা করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিছু করবে, সেখানেও আমাদের নজর রয়েছে।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন