লন্ডনে চিকিৎসাধীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাস্থ্য সন্তোষজনক হয়ে উঠছে। তাকে সারাদিনে কয়েক আউন্স পানি ও লাল চা পান করতে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলাম প্রধান সার্জন এডওয়ার্ড মুরের সঙ্গে আলোচনার পর বুলেটিন প্রকাশ করেছেন। বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা সন্তোষজনক। গত রাতে তাঁর ভালো ঘুম হয়েছে। তিনি সামান্য লাল চা খেয়েছেন। সার্বিকভাবে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির পথে। বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্যের খবর নেওয়ার জন্য লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রতিদিন অসংখ্য লোক এসে ভিড় করছেন। একই ব্যাপারে খোঁজখবর করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ফোন আসছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। ১৯৭২ সালের ১ আগস্ট লন্ডন থেকে বেগম মুজিবের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের টেলিফোনে কথা হয়। তিনি তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) সার্বিক অবস্থা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও ছেলে শেখ জামালের সঙ্গেও কথা বলেন।
দালাল ও পাকিস্তানিরা পালাচ্ছে
দালাল আর পাকিস্তানিরা নিরাপদে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর কমপক্ষে ২০ হাজার দালার ও পাকিস্তানি সপরিবারে ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ্যে পালিয়ে গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলা জানায়, প্রভাবশালী মহল এ বিষয়ে জড়িত রয়েছে। আরও জানা গেছে যে, ব্যবসায়িক ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে দালাল ও পাকিস্তানিদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় সহযোগিতা করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পাকিস্তানিরা বৈধ কাগজপত্র নিয়েই বাংলাদেশ থেকে পালাচ্ছে। জানা গেছে, আকাশ, সড়ক ও নৌপথে দালাল ও পাকিস্তানিরা নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আরও বিস্ময়কর তথ্য জানা গেছে যে, পলায়নকারীরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক পাসপোর্টও পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা— মাহমুদ আলীর স্ত্রী মাস দেড়েক আগে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যান এবং সেখানে গিয়ে তিনি বানোয়াট বিবৃতিও দেন। এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কর্মচারীরা জড়িত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়— এই কর্মচারীদের কেউ কেউ কোনও কোনও দালাল ও পাকিস্তানিকে বিমানবন্দরে নিরাপদে তুলে দিতে গেছে।
নতুন আমদানি নীতি
বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী ১ আগস্ট চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর বাণিজ্য মৌসুমের জন্য নয়া বাণিজ্য নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতিকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য জুলাই মাস থেকে কার্যকরী বলে ধরা হয়। নয়া আমদানি নীতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। সম্প্রসারিত করা হয়েছে আমদানি পণ্যের তালিকা। রফতানিতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে কাঁচামাল পরিপূর্ণ প্রকল্প। শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য উদারভাবে ব্যবস্থা করে শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অর্থনীতিতে বিধান রাখা হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্য কেন্দ্রের সমাজতান্ত্রিক ধাচের অর্থনীতির পর্যায়ে আনার জন্য নয়া আমদানী নীতিতে বিধান রাখা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তার বেতার ও টেলিভিশন বক্তৃতায় বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে জুলাই বাণিজ্য মৌসুমের আমদানি নীতিতে আমদানিযোগ্য পণ্যকে একটিমাত্র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। শিল্পকে আলাদা করে দেখানো হয়নি। এই অসুবিধা কাটাতে এবারের আমদানি নীতিতে আমদানিযোগ্য পণ্যকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।’
মহল্লায় মহল্লায় দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তুলুন
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বিপ্লবী এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে যে অশুভ শক্তি, তার মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে মহল্লায় মহল্লায় দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তোলার জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ফজলুল হকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১ আগস্ট সার্কিট হাউজ রোডে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের অফিস প্রাঙ্গণে আয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশে ভাষণ দানকালে আব্দুর রাজ্জাক দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন— স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী বাংলার মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করে যাবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন