উপমহাদেশের প্রাচীন ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হবে না- এটা যেন ভাবাই যায় না। কিন্তু সেই ভাবনাকেও বদলে দিয়েছে সারা দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও ঈদের জামাত হচ্ছে না শোলাকিয়ায়। ঈদ জামাতে লাখো মুসল্লিতে মুখর হয়ে উঠা শোলাকিয়ার বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসে এবার যেন প্রাণের কোনও স্পন্দন নেই। চিরচেনা সেই দৃশ্য নেই। নেই লাখো মুসল্লির এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায়।
ঈদের দিন শনিবার (১ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চারপাশটা কেমন যেন সুনসান নীরব হয়ে আছে। বিশাল এই ঈদগাহ প্রান্তরজুড়ে জনমানবহীন এক খাঁ খাঁ হাওয়া বিরাজ করছে। গত প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসে ঈদ জামাতে এমন গভীর শূন্যতা দেখেনি মুসল্লিতের তীর্থক্ষেত্র শোলাকিয়া ময়দান।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর ঈদুল ফিতরেও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। জেলা করোনা প্রতিরোধ ও ঈদ উৎসব উদযাপন কমিটি কদিন আগেই ঘোষণা দিলো- ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠানও বন্ধ থাকবে।
কিশোরগঞ্জ শহরতলির উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ২০০ বছরের পুরো ও ঐতিহ্যবাহী এই ঈদগাহ ময়দানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ঈদের জামাত আদায় করতে আসেন। একসময় এই ঈদগাহ ময়দানটি দেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের খ্যাতি অর্জন করে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের জামাতের আগ মুহূর্তে শোলাকিয়া মাঠে প্রবেশপথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনের তল্লাশি চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ, এক প্রতিবেশী নারী এবং এক জঙ্গিসহ ৪ জন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ১৬ মুসল্লি আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এরপর গত দু-তিন বছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত নিয়ে মুসল্লিতের মধ্যে কিছুটা ভীতি বিরাজ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ঐতিহাসিক এই মাঠে ঈদের জামাতে লোকসমাগমে এতটুকুও ভাটা পড়েনি।
প্রসঙ্গত, ১৯১ বছর আগে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে শুরু হয়েছিল ঈদের বড় জামাত। এরও দুইশ' বছর আগ থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর নানা প্রতিকূল সময় কেটেছে। কিন্তু ঈদের জামাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এবারই প্রথম টানা দুই ঈদে খালি থাকলো ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন