তাঁর স্বামী নিরাপরাধ। তাঁকে ধরে নিয়ে পুলিশ ডাকাতির প্রস্তুতি চেষ্টা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ করেন চারদিন আগে পুলিশের হাতে আটক হওয়া আল মামুনের (৩৫) স্ত্রী সাখী আক্তার (২৮)।
সংবাদ সম্মেলনে সাখী আক্তার জানান, তাঁর স্বামী আল মামুন গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের নওপাই গ্রামের মৃত আব্দুল হেলিম মাস্টারের ছেলে। তাঁরা বর্তমানে এ উপজেলার শ্যামগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন মইলাকান্দা এলাকায় বসবাস করেন। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় যাওয়ার পথে শ্যামগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বিনা কারণে জনসম্মুখে আল মামুনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান গৌরীপুর থানার পুলিশ। পরে ডাকাতির ঘটনার নাটক সাজিয়ে অপরিচিত আটককৃত জনৈক দুই ব্যক্তির সঙ্গে মামুনকেও আসামি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন গৌরীপুর থানার এস আই মাইনুল রেজা। এ মামলায় পরদিন তাঁকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
সাখী আক্তার আরও অভিযোগ করে বলেন, তাঁর স্বামী মামুনকে ৬ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্যামগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা থেকে জনসম্মুখে বিনা কারণে আটক করে থানায় নিয়ে যান পুলিশ। অথচ পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে শ্যামগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা মহাসড়কে এ উপজেলার বেলতলি এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এদিন রাত সাড়ে ১১টায় তাঁকে আটক করা হয়।
মইলাকান্দা ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ (৩৮) জানান, ৬ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্যামগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা থেকে মামুনকে আটক করেন পুলিশ। এসময় তিনি ঘটনাস্থলের পাশে অবস্থান করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ছিদ্দিক মিয়া, ইউসূফ আলী, নয়ন মিয়া , আমিনুল, সুলতান আহমেদ জানান, ৬ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্যামগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা থেকে মামুনকে আটক করে নিয়ে যান পুলিশ। তখন সেখানে কোনো ধরণের ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনা শুনেননি।
এদিকে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে উল্লেখিত ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষী এ উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের মনাটি গ্রামের মো. রদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (২৩) ও একই ইউনিয়নের চারআনী গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে আল আমিনের (২৫) উপস্থিতিতে মামুনসহ বেলতলি গ্রামের হাবিবুর রহমান (৩৫) ও খাইরুল ইসলামকে (৩৭) আটক করা হয়। তবে এ বিষয়ে স্বাক্ষী রুহুল আমীন জানান, তাঁর সামনে থেকে আল মামুনকে পুলিশ ধরেনি। তাছাড়া সেখানে ডাকাতি প্রস্তুতির কোনো ধরণের ঘটনা শোনেননি। তাঁকে স্বাক্ষী রাখার বিষয়টিও জানেন না। তিনি আরও বলেন, গত ৭ জুলাই তিনি তার এক বন্ধুর সাথে গৌরীপুর থানায় এসেছিলেন একটি কাজে। এ সময় থানার এসআই রেজার অনুরোধে একটি কাগজে স্বাক্ষর করেন বলে জানান তিনি। মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী আল আমিন জানান, তাঁকে এ মামলার স্বাক্ষী করা হলো কিভাবে তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন জানান, বাঁচার জন্য অপরাধীরা অনেক পথ অবলম্বন করে। এটাও একটা। তাছাড়া গ্রেপ্তাকৃত আল মামুনের বিরুদ্ধে খুন-চাঁদাবাজি ছাড়াও অনেক মামলা রয়েছে। কোনো ডাকাতি মামলা আছে কি না জানতে চাইলে ওসি অস্বীকার করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন