প্রেমিকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা ফেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় এক কিশোরী (১৬) বাবা, বড়ভাই ও মামার হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই কিশোরী নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামে তাদের বাড়ির পাশে তার মামার বাড়িতে থাকতো। গত ২২ জুন দুপুরে তাকে বাড়ির পাশে পাটক্ষেতে এক যুবকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন তার মামা। বিষয়টি ওই কিশোরীর বাবা ও মাকে জানান তিনি। পরদিন ২৩ জুন সকালে বাবা ও মামা মিলে ওই কিশোরীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে কিশোরীর বাবা তাকে মামার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বাবা, মামা ও বড়ভাই। হত্যা করে লাশটি স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। পরে গত শনিবার (২৭ জুন) সকালে ওই কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নাসিরনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন জানান, ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার কথা বলা হলেও প্রথমে তার পরিবার রাজি হয়নি। পরে তার মা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এতে পরিবারের প্রতি পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর ওই কিশোরীর মামাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখান থেকে ভুক্তভোগীর বাবা ও বড়ভাইয়ের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে। এরপর সোমবার (২৯ জুন) রাতে ওই কিশোরীর বাবা ও মঙ্গলবার (৩০ জুন) ভোর রাতে বড়ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তার মামা। পরে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কিশোরীর বড়ভাই।
কবির হোসেন আরো জানান, ওই কিশোরী বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো। এলাকার একাধিক ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করতো। আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার পরই স্বজনেরা পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটায়।
জিজ্ঞাসাবাদে লাইজুর মামা মাজু মিয়া জানান, লাইজুর স্বভাব চরিত্র ভালো ছিল না। বিভিন্ন ছেলেদের সাথে শারীরিক মেলামেশা করতো। গত ২২ জুন মাজু মিয়ার বাড়ির পাশে একটি পাটক্ষেতে এক যুবকের সাথে মেলামেশা করতে দেখেন তিনি। তখন বিষয়টি লাইজুর বাবা সানুকে জানান মাজু। পরে ২৩ জুন সানু ও মাজু পরিকল্পনা করেন লাইজুকে হত্যা করার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন জানান, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এবং লাশের অবস্থার আলোকে প্রাথমিকভাবে আমাদের সন্দেহ হয় এটি হত্যাকাণ্ড। পরে নিহতের পরিবারের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তারা হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন