দেশের ১০ জেলায় বজ্রপাতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাবনায় ৪ জন, ময়মনসিংহে ৩ জন, হবিগঞ্জে ৩, বগুড়া ৪, টাঙ্গাইল ১, নোয়াখালী ১, জয়পুরহাট ১, সুনামগঞ্জে ১, কুষ্টিয়া ২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২ জন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে এ বজ্রপাত হয়।
পাবনা: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাটমোহর, আতাইকুলা ও সদর উপজেলায় বজ্রপাতে চারজন মারা গেছেন। সন্ধ্যায় আতাইকুলা থানার তেলিগ্রামে বজ্রপাতে নুরুজ্জামাল মোল্লা (১৯) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। তিনি তেলিগ্রাম গ্রামের আততাফ মোল্লার ছেলে। নূরুজ্জামাল শাঁখারীপাড়া সুধীর কুমার কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। বেলা ৫টার দিকে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়ালে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে শরিফুল ইসলাম (২৭) নামে এক কৃষি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেলা সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার সাদীপুর গ্রামে ফারুক হোসেন (৩০) নামের এক কৃষক এবং পদ্মার চরে বজ্রপাতে অপর একজনের মৃত্যু হয়েছে। পাবনা সদর ওসির ধান মো. নাসিম আহমেদ ও হান্দিয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বজ্রপাতে দুই কিশোর ও এক গরু ব্যবসায়ীসহ তিনজন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার পর পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তারা মারা যান। নিহতরা হলেন, উপজেলার জঙ্গলবাড়ী গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে গরু ব্যবসায়ী মোতালেব (৫০), আছিম পাটুলী গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রবিন, (১৩) এবং বিদ্যানন্দ গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে ইমরান।
বজ্রপাতে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার জঙ্গলবাড়ি এলাকার গরু ব্যবসায়ী মোতালেব মাঠ কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। দুপুর তিনটার দিকে আছিম পাটুলী গ্রামের রবিন বাড়ির পাশে খেলা করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। অন্যদিকে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বিদ্যানন্দ গ্রামের ইমরান বাড়ির পাশে ঘুড়ি উড়ানোর সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। নিহত তিনজনের লাশ বাড়িতেই আছে বলেও জানান তিনি।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় বজ্রপাতে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সকালে পৃথক এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। মৃত শিশুরা হলো- আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নোয়ানগর গ্রামের সমর আলীর ছেলে লিলু মিয়া (১৪), বাহুবল উপজেলার মানিকা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে নসর উদ্দিন (১৩) ও একই উপজেলার নোয়াঐ গ্রামের দরছ মিয়ার ছেলে ওরকাইদ মিয়া (১১)। আহত ওসমান আলী (৮) নোয়াঐ বারিক আলীর ছেলে।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা তালুকদার ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়া: বগুড়ায় পৃথক চার উপজেলায় বজ্রপাতে চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে জেলার কাহালু, সারিয়াকান্দি, শাজাহানপুর ও ধুনট উপজেলায় এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নের এরুইল গ্রামের কছির উদ্দিনের ছেলে মোখলেছার রহমান (৫৫), সারিয়াকান্দি উপজেলার হিন্দুকান্দি গ্রামের বুলু মন্ডলের ছেলে লেবু মিয়া (৩৫), শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের হরিণগাড়ি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম (৪০) ও ধুনট উপজেলার গোপালনগ নগর গ্রামের দেরাজ আলীর ছেলে আব্দুস সালাম সরকার (৪৫)।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পৃৃথকস্থানে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর সাদিপুর ইউনিয়নের পদ্মার চর এলাকার হামিদুল মন্ডলের ছেলে রাখাল ফারুক মন্ডল (৩০) এবং একই উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর সর্দারপাড়ার ময়জুদ্দিন মন্ডলের ছেলে শফি মন্ডল (৪৫)। সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন ও কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নে বজ্রপাতে অনিক (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে ইউনিয়নের ধরেরবাড়ী গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। অনিক ওই এলাকার মো. আইয়ুব মিয়ার ছেলে ও ধরেরবাড়ী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালী: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপে মাটি কাটার কাজ করার সময় দুপুরে বজ্রাঘাতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রফিক উল্যাহ (৪০)। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের মধ্য চরবাটা গ্রামের বাসিন্দা। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের এসব তথ্য জানান।
জয়পুরহাট: বজ্রপাতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামে সুকোমল (৪৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টর দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহা. শাহরিয়ার খাঁন জানান, কৃষি কাজ সেরে বাড়ির উঠানে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতে সুকোমল গুরুতর আহত হন। পরে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুকোমল ওই গ্রামের মৃত রাজেন্দ্রনাথের ছেলে।
সুনামগঞ্জ: বজ্রপাতে তকবির হোসেন (১৩) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মিলনগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তকবির হোসেন দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের ললুয়ারচর গ্রমের খালেক মিয়ার পুত্র।
এলাকাবাসী ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার সময় কিশোর তকবির হোসেন মাছ ধরাতে মিলনগঞ্জ বাজারের পাশে হাওরে যায়। এসময় হঠাৎ তার উপর বজ্রপাত ঘটলে সে আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতাবস্থায় তকবির হোসেনকে উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে এক গৃহবধুসহ দুজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনাগুলো ঘটে। নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার চরঅনুপনগর ইউনিয়নের চরঅনুপরগর গ্রামের(২নং ওয়ার্ড) গোলাম মোস্তফার ছেলে শহীদুল ইসলাম(২৫) ও শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা কদতলা চর(৯ নং ওয়ার্ড) এলাকার হেরাস উদ্দিনের স্ত্রী পিয়ারা বেগম।
অনুপরগর ইউপি সচিব আশরাফুল হক জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাঠ থেকে ঘাষ কেটে ফেরার সময় ঝড়বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে নিহত হয় শহিদুল। পাকা ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুরুল হোদা জানান, বিকেল পাঁচটার দিকে ঝড়বৃষ্টির সময় নিজ বাড়িতে বজ্রপাতে আহত হন তিন কন্যা সন্তানের জননী পিয়ারা বেগম। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেবার জন্য নৌকায় ওঠানোর সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মারা যান।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন