করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬৫০-এ দাঁড়িয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে যে, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় কম এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় এই মৃত্যুহারেই এখনো আমরা ভালো আছি। কিন্তু মৃত্যু একজন হোক, দশ জন হোক বা ৬৫০ জন হোক- মৃত্যু মৃত্যুই। মৃত্যু বেদনাদায়ক, মৃত্যু দূর্ভাগ্যজনক। বিশেষ করে করোনায় মৃত্যু তো কখনোই কাম্য নয়। যে মৃত্যুর কারণে একজন ব্যক্তির শেষ সৎকারটুকু ঠিকভাবে হয়না, তাঁকে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী দাফন করা হয়না, এমনকি তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা তাঁর পাশে থাকে না। তাছাড়া কোন মৃত্যুই কাম্য নয়, কোন মৃত্যুই কাঙ্ক্ষিত নয়। আর কোন মৃত্যু নিয়েই কোন এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ নেই। কারণ মৃত্যু কেবল একটি সংখ্যা নয়, একটি মানুষকে কেবল বিয়োগ করেনা, করোনায় মৃত্যু একটি সমাজে দুরত্ব তৈরি করে এবং সমাজের পাশবিকতার মুখোশ উন্মোচন করে। আর একারণেই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা যতই কম হোক না কেন, প্রতিটি মৃত্যুই আতঙ্ক তৈরি করে এবং অন্যান্য রোগের তুলনায় করোনায় মৃত্যুর হার কম হলেও এই রোগটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এই কারণে যে, এটা খুবই ছোঁয়াচে, অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং মৃত্যুর পর তাঁর প্রাপ্য সম্মান বা মর্যাদাটুকুও তিনি পাননা। একারণেই করোনা প্রতিরোধ করাটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ বিভিন্ন গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে যে দেশে যখনই করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে, সেদেশে তখনই অবধারিতভাবে মৃত্যুর হার বেড়েছে বাংলাদেশ সবকিছু খুলে দেওয়ার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তের পেছনে সবথেকে বড় যে যুক্তি ছিল যে মৃত্যুহার কম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। শনাক্তের হার বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বেই এবং সামনে আরো বেশি করে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। কেন বাড়বে এর পেছনে গবেষকরা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে যে, হাসপাতালগুলোতে এখন কোন শয্যা নেই, আইসিইউ বেড খালি নেই, ভেন্টিলেটর নেই এবং নতুন রোগী ভর্তি করে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় যখন রোগীর সংখ্যা বাড়বে তখন দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়া বা দ্রুত অবনতিশীল রোগীর সংখ্যাও বাড়বে এবং তখন মানুষকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।
ইউরোপের দেশগুলোতে দেখা গেছে যে, যখন একবার মৃত্যুর সংখ্যা হুট করে বেড়ে যায়, তখন সেটাকে কমানো কঠিন হয়য়ে যায় এবং প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে যায়। তাই বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নাজুক এবং দূর্বল, সীমিত সংখ্যক সরঞ্জাম নিয়ে এই লড়াই লড়তে হচ্ছে, সেখানে মৃত্যু নয় আত্মতুষ্টি কখনোই কাম্য নয়, কখনোই উচিত নয় এবং এটা একটি ভয়ংকর খেলা। কারণ আমরা যদি রোগ প্রতিরোধ করতে না পারি, আমাদের শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা যদি বাড়তে থাকে এবং আমাদের যদি সামাজিক সংক্রমণ বিস্তৃত হতে থাকে তাহলে অবধারিত মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না এবং আমরা ভাবতেও পারবো না মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। আর এই পর্যায়ে পৌছাতে বেশি সময় নেবে না, কারণ আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যত মানুষ মারা গেছে, তাঁর ৩০ শতাংশ মানুষ মারা গেছে গত এক সপ্তাহে এবং সামনের দিনগুলো আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে।
তাই এখনই আমাদের কিছু একটা করতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এখন যা হচ্ছে তা যেন মৃত্যু মৃত্যু খেলা। এই মৃত্যু মৃত্যু খেলা অনেক ভয়ঙ্কর খেলা, অনাকাঙ্ক্ষিত খেলা এবং এই খেলার একটিই ফলাফল তা হলো মানবতার মৃত্যু এবং মানুষের জীবন যেন পাখির পালকের সমান-এরকম একটি অমানবিক বোধ তৈরি হওয়া। কাজেই আমাদেরকে মৃত্যু বন্ধ করতে হলে এখনই আমাদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। আর প্রতিরোধের পথ একটাই, তা হলো সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং কঠিনভাবে লকডাউন দেওয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন