মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে একটি ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হচ্ছেন ঢাকামুখী মানুষেরা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর রোববার (৩১ মে) থেকে শর্ত সাপেক্ষে খুলছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। এদিন থেকে সীমিত পরিসরে চলবে গণপরিবহন। শেষ সময়ে কর্মস্থলে ফিরতে শনিবার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। তবে ছিল না শারীরিক দূরত্ব। প্রায় প্রতিটি ফেরি থেকেই শত শত যাত্রী নামে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের অবর্ণনীয় কষ্ট করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
শনিবার শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ি থেকে ফেরি আসতে দেখা গেছে। এই নৌরুটে সকাল থেকেই ১৪টি ফেরি চলাচল করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হন যাত্রীরা। শিমুলিয়া ঘাটে আসার পর গণপরিবহন বন্ধ দেখে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় মিশুক, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কমলনগরে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও দুইজনের করোনা শনাক্ত
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। শিমুলিয়া ঘাটে চাপ না থাকলেও কাঠাঁলবাড়ী ঘাটে চাপ রয়েছে। ঈদ শেষে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ কর্মস্থলে ছুঁটে যাচ্ছে।
মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবীর জানান, এসব যাত্রীরা পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে গেছেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব যাত্রীরা কয়েকগুন বেশি ভাড়ায় মিশুক, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মটরসাইকেলে করে নিজ নিজ গন্তব্যে গেছেন।
পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নৌপথে ফেরিতে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকামুখী যাত্রী আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ‘সংসার চালানোর তাগিদে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছি। রবিবার সকালে অফিসে পৌঁছাতেই হবে।’
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসা পোশাক শ্রমিক মামুন মিয়া বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে সিএনজিতে দৌলতদিয়া পর্যন্ত আসতে ৫০০ টাকা খরচ হয়। আবার এখন পাটুরিয়া থেকে নবীনগর যেতে মাইক্রোবাসে ৫০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। এমনিতেই বাড়ি গিয়ে টাকা পয়সা শেষ। এরপর এখন কর্মস্থলে ফিরতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ তো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।’
আরেক কর্মস্থল ফেরত যাত্রী পোশাক শ্রমিক আফরোজা বেগম বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত সিএনজিতে আসতে ৬০০ টাকা ভাড়া নেয়। এখন কর্মস্থল সাভারে যেতে প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। সবমিলে কর্মস্থলে ফিরতে ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ব্যাটারিচালিত আটোবাইক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পাটুরিয়া থেকে ঢাকা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন। থাকছে না সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই।’
গত ২৮ মে সাধারণ ছুটি না বাড়িয়ে ১৫ জুন পর্যন্ত কঠোরভাবে বিধি-নিষেধ মেনে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলের পক্ষে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। রোববার থেকে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পূর্বের সময়সূচি অনুযায়ী ব্যাংকের লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু হচ্ছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, রবিবার থেকে অফিস পুরোদমে চালু হলেও বয়স্ক, অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের আপাতত অফিসে আসতে হবে না। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে। নাগরিক জীবন সুরক্ষিত রেখে আমরা সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতে যাচ্ছি। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে চালু হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও চলবে। হাটবাজার, দোকান-পাট সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো খুললেও মিটিং অনলাইনেই করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব দাস জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরাই সচিবালয়ে আসবেন। আপাতত কোনও দর্শনার্থীকে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।'
সরকারি-বেসরকারি অফিস চালুর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ১৩ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—
১. দফতরের বাইরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবাণুমুক্তকরণ টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
২. অফিস চালু করার আগে অবশ্যই প্রতিটি অফিস কক্ষ, আঙিনা, রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৩. প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রবেশ পথে থার্মাল স্ক্যানার, থার্মোমিটার দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে অফিসে প্রবেশ করাতে হবে।
৪. অফিস পরিবহনগুলো অবশ্যই জীবাণুনাশক দিয়ে শতভাগ জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যানবাহনে বসার সময় ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং সবাইকে মাস্ক (সার্জিক্যাল মাস্ক অথবা তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক, যা নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখবে) ব্যবহার করতে হবে।
৫. সার্জিক্যাল মাস্ক শুধু একবার ব্যবহার করা যাবে। কাপড়ের মাস্ক সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করা যাবে।
৬. যাত্রার আগে এবং যাত্রাকালে পথে বার বার হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
৭. খাওয়ার সময় শারীরিক দূরত্ব (ন্যূনতম তিন ফুট) বজায় রাখতে হবে।
৮. প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. অফিসে কাজ করার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
১০. কর্মস্থলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং ঘন ঘন সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
১১. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সাধারণ নির্দেশনাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিয়মিত মনে করিয়ে দিতে হবে এবং তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
১২. দৃশ্যমান একাধিক স্থানে ছবিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
১৩. কোনও কর্মচারী অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন