পৃথিবীজুড়ে ভয়াবহ করোনাভাইরাস রোধে সবচেয়ে বড় লড়াইটা করে যাচ্ছে চিকিৎসক, নার্সসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর মধ্যে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী, মারা গেছেন অনেকেই।
বিবিসিকে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এক বাংলাদেশি চিকিৎসক।
গোলাম রাহাত খান নামে এই চিকিৎসক চাকরি করছেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে।
তিনি বলেন, ‘মার্চের আগ পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ বেড ছিল ১৪টি। তখন পর্যন্ত আইসিইউতে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগী দু-একজনের বেশি ছিল না। এখন আমাদের আইসিইউতে অন্য কোনো রোগী নেই, সবাই কভিড-১৯ আক্রান্ত।’
ডা. রাহাত বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আপনি ঢুকছেন একটা মৃত্যুপুরীর মধ্যে। আপনি জানেন যে, শিফট শেষ হতে হতে ৩-৪ জন মারা যাবে। আমরা চেষ্টা করি কাজ চালিয়ে যেতে, যে চলে গেছে সে চলে গেছে, এখন পরের জনকে বাঁচাতে হবে। যত দিন যাচ্ছে কভিড-১৯ রোগী বাড়ছে, সূতরাং এটি মেনে নিতেই হচ্ছে। সে কারণে শারীরিক ও মানসিক একটা চাপ তো সব সময়ই আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মারা যাব ওই চিন্তা করি না, মারা তো একদিন সবাই যাব। ভয় লাগলেও আপনার পেশা এটাই যে মানুষের জন্য কাজ করছেন। একজন সৈনিক কি বলে যে, আমি যুদ্ধে যাবো না গুলি করবে। সে খুশি মনেই যুদ্ধে যায়, এটাও ওই রকম।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘নিরাপত্তার ব্যাপারে হচ্ছে, যারা সরাসরি কভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসছে, তাদের নিরাপত্তা সবার আগে। তাদের সম্পূর্ণ পিপিই দেয়া হচ্ছে। যার কাছে কভিড রোগী যাচ্ছে না যিনি ট্রমা, অর্থোপেডিকস বা গাইনি চিকিৎসক তারা সে পরিমাণ পিপিই পাচ্ছে না, এটির যৌক্তিক কারণও আছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তার স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। আমি বাচ্চাদের বলে দিয়েছি তারা যাতে আমার কাছে না আসে। তারা আপসেট থাকে। ওরা বাসার ওপর তলায় থাকে আমি নিচ তলায়। আমাদের আর এক সঙ্গে বের হওয়া হয় না। কিছুটা খারাপ তো লাগে। আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
দেশটিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স মারা গেছেন। চিকিৎসকদের এই যুদ্ধকে স্বাগত জানাতে যুক্তরাজ্যে জুড়ে মানুষ এক সঙ্গে হাততালি দিয়েছে। যে যেভাবে পারছে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করছে।
ডা. রাহাত বলেন, ‘হাসপাতালে যখন কাজ করি স্টাফরুম খাবারে ভর্তি থাকে। কাজ শেষে যখন হাসপাতাল থেকে বের হবেন অচেনা অজানা লোক এসে বলে, আপনি কি বাড়ি ফিরবেন? আমি তোমাকে দিয়ে আসতে চাই। তখন খুব ভালো লাগে, এটাই তো সার্থকতা।’
গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছে ৭৪ হাজার ৮৮৬ জন। সর্বশেষ এই তথ্য দিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। আরও জানানো হয়, আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৫২ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি নিজেও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন