করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের মতো নওগাঁর রাণীনগরেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সকল হাট-বাজার, দোকান-পাট ও যান চলাচল। যার প্রভাব পড়েছে উপজেলার শতাধিক খামারির ওপর। খামারে উৎপাদিত পোলট্রি মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
করোনার প্রভাবে এখন অর্ধেক দামেও বিক্রি হচ্ছে না এসব পোলট্রি মুরগি। এতে করে লোকসানের মুখে রয়েছেন খামারিরা। তাই কৃষির মতো এই পোলট্রি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কাছে ভর্তুকি ও সহায়তা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিস্থিতিটা এখন কেমন তা বোঝা যাবে খট্টেশ্বর রাণীনগর গ্রামের খামারি বাপ্পীর কথা থেকেই, ‘আমি বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে একটি খামার করেছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে মুরগি বিক্রি করতে পারছি না। এতে আমার খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে এবং বেশিদিন মুরগি খামারে থাকার জন্য মরেও যাচ্ছে। আমি এখন চরম বিপাকে পড়েছি। এভাবে আর কিছু দিন চলতে থাকলে আমাকে পথে বসতে হবে।’
দড়িয়াপুর গ্রামের খামারি মতিউর রহমান উজ্জ্বল হোসেন বলেছেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটির প্রতি সরকারের কোন সুদৃষ্টি নেই। তা না হলে এই শিল্পের প্রধান উপকরণ খাদ্য, ওষুধসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায় কেমন করে। যে কারণে এই শিল্পটি লাভের বদলে লোকসানে পরিণত হয়েছে। তাই এই সংকটময় সময়ে খামারিদের বাঁচানোর জন্য সরকারের উচিত সঠিক তালিকা করে সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা।’
আফতাব ফিড কোম্পানির ডিলার কেএইচএম নয়ন খাঁন লুলুও একই সুরে বলেছেন, ‘পোলট্রি শিল্পটি আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। প্রান্তিক খামারিরা আস্তে আস্তে এই ব্যবসাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ দিন দিন ওষুধ, বাচ্চা ও খাবারের দাম যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে লাভের কোন আশা নেই। বড় বড় কোম্পানিকে সরকার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি ও ডিলারদের জন্য সরকারের কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। যদি সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিতো তাহলে খামারিরা কিছুটা হলেও লাভবান হতো। এই শিল্পটিকে বেঁচে রাখতে চেষ্টা করতো।’
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হেলাল হোসেন এসব দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে লোকসানে পড়া খামারিদের ভর্তুকি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে আমি এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করবো।’
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘পোলট্রি শিল্পটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। অনেক বেকার পোলট্রি মুরগীর খামার করে বেকারত্বকে জয় করেছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বর্তমানে এই শিল্পটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত আমার নির্বাচনি এলাকার খামারিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য চেষ্টা করবো। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ এবং এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আগামীতে আমি জাতীয় সংসদে খামারিদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন