করোনার ভয়াল পরিস্থিতির মাঝে সারা দেশ অঘোষিত লকডাউন থাকার পরও ইয়াবা কারবারীরা থেমে নেই। তাদের কারবার এখনো চলছে। গত দুই দিনে পৃথক অভিযানে পুলিশ ৩৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ সময়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই ইয়াবা কারবারী। নিহতরা হলেন টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন পল্লান পাড়ার সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ (২৬) ও হোয়াইক্যং ঝিমংখালী এলাকার জাফর আলমের ছেলে মোহাম্মদ মিজান (২৪)।
সোমবার ভোররাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী চিংড়ি প্রজেক্ট এলাকায় টেকনাফ থানা পুলিশের সঙ্গে ইয়াবা কারবারীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফ মডেল থানার সামনে একটি সন্দেহজনক মাইক্রোবাস তল্লাশি করে ৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষকি আটক করা হয় মাইক্রোবাসের চালক মোহাম্মদ উল্লাহকে। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে তাকেসহ পুলিশ রাতে হোয়াইক্যং ঝিমংখালী এলাকার ইয়াবা আস্তানায় ইয়াবা উদ্ধার করতে গেলে সেখানে আগে থেকে উৎ পেতে থাকা ইয়াবা কারবারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে অতর্কিতে গুলি ছুঁড়ে আটককৃত ব্যক্তিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে ইয়াবা কারবারীরা পালিয়ে যায়। উভয় পক্ষের গোলাগুলি শেষে পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত কারবারীদ্বয় গত তিন বছর ধরেই পুলিশকে এক প্রকার বেকুব বানিয়ে সীমান্ত থেকে ইয়াবার চালান পাচার করে আসার চাঞ্চল্যকর কাহিনী বেরিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত মাইক্রোবাস চালক মোহাম্মদ উল্লাহ তার মাইক্রোবাসটি নিয়ে রাষ্ট্রীয় সোনালী ব্যাংক টেকনাফ শাখার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার টাকা আনা নেওয়া করত। গতকাল রবিবারও তার মাইক্রোবাসটি সোনালী ব্যাংকের টাকা আনতে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করে এবং মাইক্রোবাসে বিশেষ কৌশলে রাখা ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এ বি এম মাসুদ হোসেন আরো বলেন, ইয়াবা কারবারী চালক মোহাম্মদ উল্লাহর মালিকানাধীন মাইক্রোবাসটি গত তিন বছর ধরে সোনালী ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ। তারা প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকের প্রয়োজনে কক্সবাজার শাখায় টাকা নিয়ে যেতো এবং কখনো টেকনাফে টাকা নিয়ে আসতো। রাষ্ট্রীয় নির্দ্দেশে সরকারি ব্যাংকের এসব টাকা আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই গাড়িতে পুলিশি পাহারা থাকতো। সে সুবাদে উক্ত মাইক্রোবাসটি চেকপোস্ট বা অন্য কোথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করত না। মাইক্রোবাসের চালক ইয়াবা কারাবারী মোহাম্মদ উল্লাহ সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংক যতবারই তার গাড়িটি ব্যবহার করেছে তখনই সে গাড়িতে সুকৌশলে ইয়াবা মজুদ করে রাখতো এবং সেগুলো কক্সবাজার পাচার করতেন। এভাবে করে সে তিন বছর ধরে এ কারবার চালিয়ে আসছিল। বলতে গেলে পুলিশি পাহারায় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ভাড়া গাড়ি ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছিল! তবে পুলিশ শেষ পর্যন্ত তার অপকৌশল ধরতে সক্ষম হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক আবুল মনজুর জানান, গাড়িটি ব্যাংকের টাকা আনতে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। গাড়িটি এসে প্রথমে পুলিশ সদস্যদের তুলতে থানায় ঢুকেছিল। এ সময় পুলিশ গাড়িটি তল্লাশি করে সেখানে ইয়াবা উদ্ধার করে। তবে এই মাইক্রোবাসটি সোনালী ব্যাংকের টাকা আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, বন্দুকযুদ্ধে নিহত আরেক ইয়াবা কারবারী মোহাম্মদ মিজানও মোহাম্মদ উল্লাহর সাথে যৌথভাবে ইয়াবা পাচার করতেন। মিজানের পরিবারের আরো ৬ সদস্য ইয়াবা কারবারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। গতবছর তার এক ভাই সোনা মিয়া পুলিশের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক হয়ে এখনো কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। মিজান কক্সবাজারে পাচার করা ইয়াবার একটি অংশ কৌশলে কারগারে তার ভাই সোনা মিয়ার কাছে পৌঁছাতেন। তার ভাই কারা কর্তৃপক্ষের সাথে হাত করে কারগারে একটি ক্যান্টিন ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করতেন। তিনি সেখানে ক্যান্টিন পরিচালনার আড়ালে কারাগারে আটক ইয়াবা আসক্তদের ইয়াবা বিক্রি করে আসছিলেন।
এদিকে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল রবিবার রাতে কক্সবাজার লিংক রোড এলাকায় একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স তল্লাশি করে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় তিন ইয়াবা কারবারীকে আটক এবং ইয়াবা বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন টেকনাফের আব্দু শুক্কুর (২৬), ভোলা জেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহাগ (২৩) ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৩০)।
কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া ও পরিদর্শক আশরাফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা আরো জানান, চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে মারা যাওয়া একজন রোহিঙ্গার লাশ নিয়ে পাচারকারীরা উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়েছিলেন। পওে রোহিঙ্গা শিবির থেকেই ইয়াবার চারানটি নিয়ে তারা ফিরছিলেন চট্টগ্রামে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন