করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নাড়িয়ায় শনিবার যে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন, তাদের একজনের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। ৯০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির ছেলে জানান ওরসে গিয়ে তার বাবা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তার মৃত্যুর খবরে স্থানীয় প্রশাসন ৩৪টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এসব বাড়ির ১৮৯ জনকে।
নড়িয়ায় করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রাও।
শনিবার রাত থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার সব গ্রামে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। রবিবারও করা হয় মাইকিং।
এতে বলা হয়, শনিবার ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নড়িয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে। এ ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থায় উপজেলার সব জনসাধারণকে জানানো যাচ্ছে যে, অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাবেন না। শুধু মাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ, সার ও বীজের দোকান ব্যতীত সব হাট-বাজার বন্ধ থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার নমুনা পরীক্ষার পর করোনায় বৃদ্ধের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
এর আগে বুধবার হঠাৎ অসুস্থ হলে ওই বৃদ্ধকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্বজনরা। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় পাঠায় চিকিৎসকরা। পরে ঢাকার মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব নিশ্চিত করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী আবু তাহের।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ পরিবারকে না দিয়ে আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ করোনাভাইরাস।
প্রশাসন জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি ও আশপাশের ৩৪ বাড়ি লকডাউন করা হয়। এ ছাড়া পাশের উপজেলায় ওই ব্যক্তির মেয়ে ও বোনের বাড়ি লকডাউন করা হয়। এসব বাড়ির সদস্যদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নড়িয়া উপজেলার কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন মাইকিং করে তা জানাতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তারা জানায়, যেহেতু মৃত ব্যক্তি নড়িয়ার অনেক মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাই এর সংক্রমণ ব্যাপক হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ঘড়িসার বাজারের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন খান বলেন, আমাদের উপজেলায় একজন লোক করোনায় মারা গেছে শুনেছি আমরাও এখন আতঙ্কে আছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সরকারের আইন মেনে চলছি।
মৃত বৃদ্ধের বড় ছেলে বলেন, আমার বাবা দেওয়ানবাগীর ভক্ত। ২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় দেওয়ানবাগীর ওরস ছিল। তিনি ওরসের তিন দিন দেওয়ানবাগীতে ছিলেন। বাবা সেখান থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমার ধারণা। কারণ আমাদের পরিবারে বিদেশফেরত কেউ নেই। গত এক মাসে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিদেশফেরত কেউ আমাদের বাড়িতে আসেনি। বিদেশফেরত কারও বাড়িতে আমরাও যাইনি। কাজেই বাবা দেওয়ানবাগীর ওরসেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, লকডাউন করা বাড়িগুলোর ওপর নজর রাখছে পুলিশ। যাতে করে তারা বাহিরে বের হয়ে হাট বাজারে যেতে না পারে। পরবর্তী নির্দেশ না আশা পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন