প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রবিবার থেকে তৈরি পোশাক কারখানা চালুর ঘোষণা দেন মালিকপক্ষ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা সকালে কারখানায় যোগদানও করেন।
তবে সমালোচনার মুখে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য বিজিএমইএর নির্দেশনার পর পোশাক কারখানা পুনরায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে রবিবার অনেক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা কারখানার ফটক থেকেই বাড়ি ফিরে যান। তবে সাভার-আশুলিয়ায় এখনো প্রায় অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে সাভার-আশুলিয়ার সড়কগুলোতে কাজে যোগদানের জন্য শ্রমিকদের ঢল নামে। নির্ঘুম রাত শেষে জীবিকার তাগিদে কাজে যোগদান করেন পোশাক শ্রমিকরা। নানা বিড়ম্বনা ও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে এলেও কারখানা খুলে দেয়ার প্রায় ৪ ঘণ্টার মধ্যেই অধিকাংশ কারখানা নোটিশ দিয়ে আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে নতুন করে আবারও বিড়ম্বনায় পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমিকরা। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন তারা।
ঢাকা ইপিজেডের মহা ব্যবস্থাপক আবদুস সোবহান জানান, সাভার ইপিজেডের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রবিবার প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। ইতিমধ্যে কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও সুইডেন ও গ্রিনল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে কিছু কারখানায় কাজ চলছে। তবে প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।
কলমায় অবস্থিত উইন্টার ড্রেস লিমিটেড নামে পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ কর্মদিবসের মতো কারখানা চালু রয়েছে। এখানে সামাজিক দূরত্ব না মেনে গায়ে-গা লাগিয়ে দলে দলে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করছেন।
কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে উইন্টার ড্রেস লিমিটেডের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বাসায় নিজেরা যেভাবে ভালো থাকার চেষ্টা করি সেভাবেই শ্রমিকদের কারখানায় ভালো রাখার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে কাজের বেশির ভাগ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে। দু’একটি ক্রয়াদেশ রয়েছে যেগুলো জরুরিভাবে সিপমেন্ট দেয়ার জন্য কারখানা খোলা রেখেছি।
এছাড়াও আশুলিয়ার পলাশবাড়ীতে স্কাইলাইনের নিটিং, ইপিজেড এলাকার গোল্ড টেক্স, একটর অ্যাপারেলস, গ্লোবাল, শান্তা ইন্ডাস্ট্রিজ, সাভার কলমা এলাকায় হট ড্রেস গ্রুপ, সাভারে আল মুসলিম, আলনিমা, ডেনিয়েল টেক্স, ঢাকা টেক্সটাইল, সাভার টেক্সটাইল, বিরুলিয়া বউবাজার এলাকার এবিসি বাংলা অ্যাপারেলস লিমিটেড, বিরুলিয়ার মাইন্ড ওয়ান নিট কম্পোজিট লিমিটেড, হেমায়েতপুরের এবি অ্যাপারেলস, জামগড়ার এসএনএস অ্যাপারেলস, জামগড়ার নিটওয়্যার লিমিটেড, ছাফা সোয়েটার, এসকেআরএম ও আশুলিয়ার বারইপাড়ার তানজিলা টেক্সটাইল লিমিটেডসহ প্রায় অর্ধশত পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা খাইরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, করোনার প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের সবকিছুই লকডাউন করে রাখা হয়েছে সেখানে পোশাক কারখানার মালিকরা কারখানা খোলা রেখে কাজটা সঠিক করেনি। শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে কারখানা খোলা রাখায় করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। যদি কোনো কারণে শ্রমিকদের ভেতরে করোনা একবার সংক্রমিত হয়, তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সবার জন্য কঠিন হবে। তাই সরকার ও বিজিএমইএর কাছে দাবি তারা যেন সকল কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে শ্রমিকদের ঝুঁকিমুক্ত করেন।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় রবিবারও তালিকা টাঙিয়ে পোশাক কারখানায় ১৭৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাই প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেলে চাকরি হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, অব্যাহতির তালিকায় থাকা সব শ্রমিক ও স্টাফদের কাজ সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদের চাকরি স্থায়ী না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা গত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত শ্রমিক ও স্টাফদের আগামী ৩০ এপ্রিলের ভেতর এসে সব পাওনা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ‘ইসকেই ক্লথিং লিমিটেড’ কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জহরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটি চাকরির একটি অস্থায়ীকরণ নিয়ম রয়েছে। আমাদের কারখানায় সেই নিয়ম মানা হয়েছে। যারা অস্থায়ী চাকরি করা অবস্থায় কাজে সন্তোষজনক নয় তাদের স্থায়ী করা হয়নি। তাই প্রধান ফটকে ১০৩ জন শ্রমিকের চাকরি থেকে অব্যাহতির নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকার দি ক্লথ অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডের ৭০ জন শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে শনিবার আশুলিয়ার জামগড়ায় ফ্যাশন ফোরাম কারখানার ১৮৯ জন শ্রমিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার বলেন, মালিকদের উচিত জরুরি ভিত্তিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকার জন্য একটি তহবিল করা। যে শ্রমিকরা আমাদের অর্থনীতি এতটাই এগিয়ে নিচ্ছে তাদের যদি আমরা বিপদের সময় ছুড়ে ফেলে দিই তাহলে তো এটা দায়িত্বশীল কাজ হবে না। এই সংকটপূর্ণ সময়ে শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে সরকারও মালিকপক্ষের বিশেষ গুরুত্ব রাখা দরকার।
কারখানাগুলোতে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন