মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে তিন দফায় সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, বাইরে বের না হয়ে সবাই ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সেনাবাহিনী পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে। এই অবস্থায়ও লোকজনকে ঘরে রাখা দুস্কর। এরমধ্যে কোনো কোনো পরিবারে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আরেক সদস্য হচ্ছেন হাসির পাত্র।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একমনই একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছন সাংবাদিক জনি রায়হান। আমাদের সময় অনলাইনের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস নিয়ে বারবার সচেতনতামূলক কথা বলে পরিবারের সবার কাছে এখন আমি হাসি-ঠাট্টার পাত্র। সবাই ভাবে আমি নিজের মৃত্যু ভয়ে এমন ছটফট করছি। অনেকে তো আমাকে নন্দলালের কবিতাও শোনাইছেন...
সবই মুখ বুজে সহ্য করছি, কিন্তু তারা তো তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনই করে চলেছেন। তাহলে দেশের সব কিছু বন্ধ করে, আইনশৃখলা বাহিনীকে মাঠে নামিয়ে, হাজার হাজার বেডের হাসপাতাল প্রস্তুত করলো কেন সরকার... তারা কেউই সেটা বুঝতে নারাজ!
এই অল্প বয়সে নিজের জীবনের ঝুঁকি বহুবারই তো নিয়েছি। সেটা হয়তোবা পরিবারের অনেকেরই অজানা। তাই নিজের মৃত্যু নিয়ে এত ভয় পাই না।
কিন্তু ছেলে-মেয়ে, মা, বাবা, স্ত্রী, শ্বশুড়, শাশুড়ি, শ্যালিকা, চাচা, ভাই-বোন সবার চেহারাগুলোর দিকে যখন বার বার তাকাই, তখনি ভাবি সর্বনাশা করোনা যদি এই মায়ার বন্ধন থেকে কাউকে কেড়ে নেয় তাহলে সেটা তো সহ্য করতে পারবো না।
আর এই ভাবনাতেই প্রতি মুহূর্তে সবাইকে বার বার স্বাস্থবিধি-আইন-নিময় মেনে চলতে বলি। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে।
গত কয়েক দিনে দুই পরিবারের লোকের কাছে করোনার সর্তকর্তা, ভয়াবহতা, বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। সকলেরই ধারণা, করোনা তাদের এলাকায় আসবে না, আসলেও তাদের পরিবারে আঘাত হানবে না। আর যদি আসেও সেটা আল্লাহ লিখেই রাখছে। আর সাবধান হইয়া কোনো লাভ নাই।
সকলেই লোক দেখানো, কিংবা শুধুমাত্র আমাকে দেখানো সর্তকর্তা মানার নাটক করে চলেছে। দুই বাড়ির কর্তারাই নানা খরচের অজুহাতে, পান-সিগারেট খাওয়ার অজুহাতে দিনে কমপক্ষে দুইবার বাজারে আসা-যাওয়া করছেন। আর মিছেই ঘরবন্দী থাকার নাটক করে চলেছেন।
তারা ভাবছেন, ধুর কিছু হবে না। আসলে কিছু না হোক সেটাই ভালো। কিন্তু ঘটে তো চলেছেই! প্রতিদিনই তো বেড়ে চলছে করোনা রোগী। এসব কথা শুনে একজন তো একদিন বলেই ফেললেন, আরে আগে পাশেপাশে ২/৪ টা মরুক তারপর দেখা যাবে। অত ভয় করে তো লাভ নাই।
আরেকজন বললেন, এই বিপদে মানুষেরা পাশে থাকতে হয়, বাবা তাই...আমি বলি, বাইরে না গিয়েও কৌশলে মানবসেবা করা যায়।
অপর দিকে পরিবারের আরেকজন সুশিক্ষিত
তো করোনা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই লোকাল বাসে চড়ে ঢাকায় গেছেন, চাকরি বাঁচাতে। আবার বাড়ি ফিরবেন হয়তোবা কোনো গণপরিবহনেই। জীবনের চেয়ে নাকি দায়িত্বটাই খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার কাছে। বাকিটা বুঝে নিয়েন...
বাড়ির বৃদ্ধ যারা আছেন, তাদের কথা না বলাই ভালো। সারা বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার তাদেরই। আর আমার পাশে যে বৃদ্ধরা আছেন, পাশের বাড়ি বেড়াতে না পারলে ঘুম হয় না তাদের। একজন তো বাড়িতে থাকেন ৬ ঘণ্টা, আর বাজারের আশেপাশে ঘোরেন ১৮ ঘণ্টা।
পরিশেষে বলতে চাই, করোনা পাগল আমি! আর সবাই সুস্থ। আমার নিজের পরিবারের সদস্যদেরই বাড়ির বাইরে যাওয়া আটকাতে পারছি না, তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসনের দোষ দিয়ে লাভ কি???
#আমার আপনজনেরা,যেন থাকে দুধে ভাতে! #ধন্যবাদ
#করোনা নিপাত যাক
#আল্লাহ মহান’click here
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন