মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার রায়নগরে একাকি ঘরে কয়েকদিন ধরে মরে পড়ে আছেন নাদের শেখ নামে এক বৃদ্ধ। লাল রঙের লেপের নিচে পড়ে আছে লাশটি। কবে মারা গেছেন জানে না কেউ। কোনো প্রতিবেশীও রাখেনি সেই খবর। খবর রাখেননি কোনো জনপ্রতিনিধিও।
শনিবার সকালে বদ্ধঘর থেকে গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীরা তার ঘরে গিয়ে দেখার পর পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে।
স্থানীয়রা জানায়, শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের মৃত ছোবদুল শেখের ছেলে নাদের শেখ (৬৫) অতি দরিদ্র মানুষ। তার স্ত্রী বাবার বাড়ি শৈলকুপাতে থাকেন। একমাত্র ছেলেটি থাকেন ঢাকাতে। তাই একা একাই ফাঁকা বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি।
আর যখন যেখানে যে কাজ পান তাই করে নিজের খাবার জোগাড় করেন। কিন্তু কবে কখন তিনি মারা গেছেন সেই বিষয়টি কারো জানা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে তার শরীরে সাদা গুমোট ধরে গেছে। সাদা পেজা তুলোর মতো ছেয়ে গেছে শরীরের সবখানে।
এ বিষয়ে নাকোল ফাঁড়ির এসআই প্রসেনজিত জানান, তার শরীরে কোনো রোগ-শোক ছিল না বলে শোনা গেছে। তাছাড়া বদ্ধঘরে মৃত অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে। বিধায় এটি বার্ধক্যজনিত স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে। স্ট্রোকও করতে পারেন। তার পরিবারের লোকদের খবর দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে শ্রীপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, তার মৃত্যু অন্যকিছু নয়। আগে দুইবার স্ট্রোক করেছে। এমনিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তবে গত কয়েকদিন ধরে সারা উপজেলাতে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন মহলের লোকজন ত্রাণ নিয়ে এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়ানোর হাজার হাজার ছবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে গেলেও কেউ তার খবর না রাখায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার নানা স্লোগান দেয়া হলেও তার খবরটি কেউ না নেয়ায় নিজেই লজ্জিত বলে মন্তব্য করেছেন বাকি বিল্লাহ সান্টু নামে মাগুরার একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।
ঘরে থাকুন-আমরা খাবার পৌঁছে দেব- এমন হাজারো স্লোগান গত কয়েকদিনে শোনা গেলেও বৃদ্ধ নাদের শেখের এভাবে পড়ে থাকায় সেই সব স্লোগানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
অথচ এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়নুর রশিদ মুহিতের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন