করোনা ভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া বন্ধ আছে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অফিস-আদালত, গণপরিবহনও বন্ধ। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। কিন্তু রোবাবার (৫ এপ্রিল) থেকে গার্মেন্টস ও বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় জীবিকার তাগিদে সবকিছু উপেক্ষা করে দলে দলে ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেসরকারি চাকরিজীবী ও পোশাক শ্রমিকরা পরিবহন না পেয়ে হেঁটে, মালবাহী লরি ও পিকআপ ভ্যান চেপে ঢাকায় ফিরছেন দেখা গেছে।
গাদাগাদি করে গ্রাম থেকে ঢাকামুখী এসব মানুষের ফেরা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
ksrm
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফেরা সাংঘাতিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে সবাইকে।
আর পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, কারখানা বন্ধের সময় তাদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থানের কথা বলা হলেও তারা কেন গ্রামে গেছে জানা নেই। এখন বেতন নেওয়ার উদ্দেশে তাদের ঢাকা ফেরা। কোনো যানবাহন চলাচল না করাই ঢাকা ময়মনসিংহ ১১২ কিলোমিটার দুরের পথ পায়ে হেটে রওয়ানা হয়েছেন অনেকে। পথে ছোট ছোট যানবাহন ব্যবহারও করছেন অনেকে। প্রশাসনের পক্ষে থেকেও নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপ। তবে এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। আগতদের সবাই বলছেন, রোববার (৫ এপ্রিল) কারখানা খুলবে, সময়ের আগেই স্ব স্ব কর্মস্থলে পৌঁছাতে হবে।
পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে ঢাকামুখী পোশাক শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ
হাইওয়ে পুলিশ বলছেন কোনো পিকআপ ভ্যানে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
শালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকটি পিকআপ ভ্যান যাত্রী বহন করে যেতে চেয়েছিল। সেগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই পায়ে হেটে রওয়ানা হচ্ছে। গণপরিবহন নেই, যারা যাচ্ছেন কিংবা আসছেন তারা বিভিন্ন পেশার মানুষ।
তবে শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থানের জন্য বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কারখানা বন্ধের সময় সব শ্রমিকদের নিজ বাসায় নিরাপদে অবস্থান করতে বলেছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল তাদের বেতন নিদিষ্ট সময়ে তারা পেয়ে যাবেন। বর্তমানে গণপরিবহন বন্ধ। তাদের বলা হলো বাসায় অবস্থান করতে কিন্তু তারা চলে গেলেন গ্রামের বাড়িতে। শ্রমিকরা যে গ্রামে গেছে এটা জানা ছিল না।
পথে যানবাহনের অপেক্ষা ঢাকামুখী মানুষ। ছবি: বাংলানিউজ
তিনি বলেন, এখন তারা আবার ঢাকায় আসছেন বেতনের জন্য। যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পান এক্ষেত্রে তাদের বেতন নিতে আসার প্রয়োজন নেই। যথাসময়ে তাদের বেতন অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
এদিকে ঢাকার বাইরে থেকে গাদাগাদি করে ঢাকায় প্রবেশ বড় বিপদ ঢেকে আনতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাক, পিকআপে ভ্যানে কিংবা এক সঙ্গে গাদাগাদি করে আসা সাংঘাতিক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আগতদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ থাকলে তার মাধ্যমে কারখানায় ছড়াবে, বাসায় ছড়াবে। সে যেখানে অবস্থান করবে হয়তো সেখানেই সমস্যা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে ঢাকায় আগতদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন