বাংলাদেশে প্রাণঘাতী করোনায় প্রথম মৃত্যের পর থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। তবুও সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর বলছে করোনায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৬ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬।
দেখা গেছে, চার বছরের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্যমতে, এ বছরের মার্চে গত বছরের মার্চের তুলনায় এআরআইতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। গত ৩০ই মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮২০, ২০১৮ সালে ১০১০ এবং ২০১৭ সালে ১৪১ জন।
এদিকে গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ জন মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশিতে মৃত্যু বরণ করছে। দেখা গেছে গত এক মাসে অর্ধশতাধিক মানুষ এই উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যু হয়েছে কিছু সংখ্যক মানুষের।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ বছরই কেন এতো নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত? এবং শুধু মাত্র জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে কি এতো মানুষের মৃত্যু সম্ভব? নাকি ক্ষমতাসীনরা করোনার তথ্য গোপন করতেই আক্রান্ত রোগীকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দেখিয়ে দিচ্ছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে এতো মানুষের মৃত্যু সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এসে চরিত্র বদল করেছে করোনাভাইরাস। এছাড়া ক্ষমতাসীনরা শুরু থেকেই নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে তথ্য গোপন করে চলছে। তারা বলছেন, দেশের মানুষজনের জীনগত বৈশিষ্ট্যের উপরেও অনেক সময় রোগের প্রাদুর্ভাবের সম্পর্ক থাকে। তাই সর্দি কাশিতে নয় বরং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও তথ্য গোপন করার অভিযোগ তুলে পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলছেন, “বাংলাদেশ পরিচালিত হয় গোয়েন্দাদের দ্বারা। তারা জানে কিভাবে তথ্য লুকাতে হয়। পরীক্ষার দায়িত্ব শুধু একটা এজেন্সিকে দেয়া হল। দুই হাজার কিট থাকা সত্বেও তারা দুশো’টা ব্যাবহার করতেই সময় নিয়েছে অনেক বেশি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যপক বলছেন, ‘‘আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনার দেওয়া তথ্যানুযায়ী ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৫ জন তাদের ফোন করেছেন। এরমধ্যে আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছে মাত্র ১,৩৩৮ জনের, তার মানে মাত্র ০.১৪ শতাংশের। এ ১৩৩৮ জনের মধ্যে নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৪৯ জন। ১৩৩৮ জনের মধ্যে করোনা রোগী ৪৯ জন। ঐকিক নিয়মে ফোনকারী সকলের (৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৫ জন) টেস্ট করা হলে আক্রান্ত পাওয়া যেতো ৩৪ হাজার ৯ শত ৯০ জন। এ হিসেবে দেশে করোনা আক্রান্ত আছেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।’’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন আসবে আইইডিসিআর তো লক্ষন শুনে বাকীদের টেষ্ট করেনি, তাহলে তাদের মধ্যেও এতো করোনা রোগী পাওয়া যাবে কেন? উত্তর হচ্ছে তারা যাদের টেস্ট করেনি, বা করতে চায়নি, তাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়া লোকের সংবাদ আমরা পাচ্ছি প্রায় প্রতিদিন। করোনায় যাদের মৃত্যুসংবাদ আমরা পাই তাদের মধ্যে বরং টেস্ট করা হয়নি এমন মানুষের সংখ্যা আরো বেশী। সে বিবেচনায় স্বেচ্ছাচার ভাবে যাদের টেস্ট করা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে করোনা রোগীর হার কোনভাবে কম থাকার কথা না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন