চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে গিয়ে যেসব বাংলাদেশি করোনা মহামারীর কারণে আটকা পড়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে জরুরি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। তবে পুরো ভারতে লকডাউন চলমান থাকায় আটকেপড়াদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।
এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যেসব বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন, তারাও দেশে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
তবে এ দুটি দেশসহ অন্যান্য দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আপাতত কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত থেকে যাদের ফিরিয়ে আনা হবে, তাদের লিখিত দিতে হবে যে, প্রত্যেকেই ১৪ দিনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, সে দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশির আর্থিক সংকট, ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণসহ অন্য যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলোর সমাধান করা হয়েছে।
তারা বলছেন, ওষুধ ও খাদ্য সংগ্রহের মতো জরুরি প্রয়োজনেও রাস্তায় বের হলে পুলিশ মারধর করছেন। আটকেপড়া বাংলাদেশিরা সেখানে অনেকটা মানবেতরভাবে আছেন। এ ছাড়া বেঙ্গালুরুর, দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতায়ও অনেক বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। তারাও একই রকম সমস্যায় আছেন। সবাই চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে আসতে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে অনেক বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। বিশেষ করে ভারতে যারা আটকা, তারা দেশে আসতে পারছেন না। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
তবে ভারতের সর্বত্র লকডাউন চলায় তা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারত বিশাল রাষ্ট্র। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে এখন যাতায়াত বন্ধ। ফলে সব বাংলাদেশিকে এক জায়গায় জড়ো করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ ছাড়া তাদের আনতে হলে চার্টার্ড বিমানে করে আনতে হবে। আমরা ভারতের দুটি বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা ১৭০ সিটের একটি বিমানের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা ভাড়া যাচ্ছে, যেটি অত্যন্ত বেশি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশের নাগরিকও এখন বাংলাদেশে আটকা পড়ে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে যেসব নাগরিককে তারা ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা নিজ খরচেই ফিরছেন, মিশনগুলো শুধু ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আবার আটকে পড়ায় অনেকেরই অর্থ শেষ হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের এ শর্তে ফিরিয়ে নিচ্ছে যে, তারা দেশে ফিরে গিয়ে বিমান খরচ দিয়ে দেবে।
ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে কী চিন্তা করছে সরকার? এ প্রশ্নে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা চিন্তা করছি যে, ভারতে আটকেপড়া যেসব বাংলাদেশি নিজ খরচে ফিরতে রাজি আছেন, তাদের আমরা একটি বিশেষ বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনব। এ জন্য আমাদের যে হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেখানে যোগাযোগ করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ভারত থেকে যাদের ফিরিয়ে আনা হবে, তাদের লিখিত দিতে হবে প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এদিকে থাইল্যান্ডে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ বাংলাদেশি দেশে ফিরতে ব্যাংককের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর নাজমুল হক। তবে থাইল্যান্ডে ৮০ জনের মতো বাংলাদেশি আটকা আছেন বলে জানা গেছে।
আটকেপড়াদের ফেরানোর ব্যাপারে নাজমুল হক সাংবাদিকদেও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত আটকেপড়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চিকিৎসা করাতে এসে আটকা আছেন এমন সংখ্যা কম। অনেকে ঘুরতে বা বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে এসে আটকা পড়েছেন। তা হলে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় তাদের ফেরানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর পরও আমরা চেষ্টা করছি।
সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার কারণে কেউ আটকা আছেন বলে আমাদের কাছে কোনো খবর নেই। তবে ২-৩ জন যারা স্বল্পসময়ের ভিসায় এসেছিলেন, তারা ফিরতে চান বলে আমাদের জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুর সরকার পুরো দেশ লকডাউন ঘোষণা করায় এখনই তাদের ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাদের এই সময়ের মধ্যে ভিসা শেষ হয়ে যাবে, তাদের বিষয়ে বিবেচনা করবে সিঙ্গাপুর সরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন