করোনা ভাইরাসোত না, হামরা এলা না খাই মরিমো’ -কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেংঠী বাজারের চায়ের দোকানদার সাপিয়ার রহমান। সরকারি সহায়তা এখনো তাদের ভাগ্যে জোটেনি। শুধু সাপিয়ার রহমান নন তার মতো পঞ্চগড়ের কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীর পরিবারে চলছে একই সংকট। ঘর থেকে বের হতে না পারায় চরম দুর্ভোগে কাটছে তাদের দিন। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ।
চেংঠী বাজারের চায়ের দোকানদার সাপিয়ার রহমানের বাড়ি ভিটা নেই। দোকানের এক কোণে ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে বাস করেন তিনি। ছোট্ট এই চায়ের দোকানের আয়েই চলতো তার সংসার। কিন্তু করোনায় থমকে গেছে জীবনযাত্রা। ঘরের চাল ডালও ফুরিয়ে এসেছে। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিনরাত। এই সংকট কতদিনে শেষ হবে তাও জানা নেই তাদের।
সাপিয়ার রহমান বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের তানে সরকার দোকানপাট বন্ধ করি দিল। দোকাদারির টাকা দিয়াই হামার সংসার চলে। এলা দোকান বন্ধ ঘরত নাই চাল ডাল। এনং অবস্থা চলিবার ধইল্লে করোনা ভাইরাসোত না, হামরা এলা না খাই মরিমো।’
স্থানীয়রা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরা। পঞ্চগড়ের প্রায় ৫০ হাজার পাথর শ্রমিক, কয়েক হাজার চা শ্রমিক, হাজারো দিনমজুর, কৃষি শ্রমিক ও রিক্স ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের পরিবারে নেমেছে আকাল। সরকার, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তা জেলার বিরাট অঙ্কের নিম্ন আয়ের মানুষের তুলনায় খুবই কম। অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌছেনি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান বলেন, ’আমরা এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার মানুষকে ত্রাণ পৌছে দিয়েছি। যারা ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই দেয়া হচ্ছে। অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে যারা এখনো ত্রাণ পাননি তাদের ত্রাণ পৌছে দেয়া হবে।’
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, ’আমরা প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তদের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মানুষকে চাল ও নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আমরা যা বরাদ্দ পাচ্ছি সাথে সাথেই তা বিতরণের জন্য পাঠানো হচ্ছে। যদি প্রকৃত দুস্থ অসহায় ও শ্রমজীবীদের কেউ বাদ পড়ে থাকেন আমাদের জানালে আমরা তাকে ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করবো।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন