করোনা ভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ১০দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। করোনা ভাইরাস যাতে সংক্রামিত হয়ে বিস্তার লাভ না করে সে লক্ষ্যেই সকলকে ঘরে বসে থাকার জন্য এ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্ত বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটা। গত বুধবার থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে দেখা গেছে ঘরমুখো হাজারো কর্মজীবী মানুষের ভীর। রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং পাবনা-ঈশ্বর্দীর মধ্যে সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আরিচা এবং পাটুরিয়া ঘাট। সরকা ছুটির কথা শুনে বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয় এসব অঞ্চলের মানুষ।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হলেও ফেরি চলে সীমিত আকারে। এদিকে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হলেও ইঞ্জিন চালিত স্যালো নৌকা চলাচল অব্যাহত থাকে। নদী পার হতে ঘাটে আসা এসব যাত্রীরা ফেরি ও স্যালো নৌকায় গাদাগাদি করে নদী পার হয়ে গন্তব্যে পৌছাতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রাজধানী ছেড়ে আসা হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া ও কাজিরহাট নেমে বিভিন্ন যানবাহনে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
লঞ্চ ও স্পিডবোট মালিকরা জানান, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার দুপুর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করলে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্ত ঘাট এলাকায় যানবাহনের অতিক্তি চাপ থাকায় বৃহস্পতিবার শুক্রবারও ফেরি চালু রাখে বিআইডব্লিউটিসি। বৃহস্পতিবারও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেশি ছিল।
তবে জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করার জন্য সীমিত আকারে ফেরি চলাচল অব্যহত রয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদুল ইসলাম জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সারা দেশের মতো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে দৌলতদিয়া- কাজিরহাট যাবার জন্য হাজারো মানুষের ঢল নামে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরি, স্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ট্রলারে করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা-যমুনা পাড়ি দেয় যাত্রীরা। এ সুযোগে ট্রালার মালিকরা যত্রীদের কাছ থেকে ৫০টাকার ভাড়া ২০০ টাকা এবং মোটরসাইকেলের জন্য ৭০০ টাকা করে আদায় করে থাকেন।
পাবনাগামী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও বুধবার এবং বৃহস্পতিবার লোকাল যাত্রীবাহী বাস চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ঢল নামে। তবে নৌরুটে লঞ্চ-স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীদেরকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নৌযান চলাচল বন্ধ না করলেও এরকম দুর্ভোগ হতো না। ঘাট এলাকায় এত ভিড়ও হতো না।
ঈশ্বরর্দীগামী আবুল হাসেম বলেন, যেহেতু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লোকাল বাস চালু ছিল, সেহেতু নৌযানও চালু রাখার দরকার ছিল। তাহলে ট্রলারে যাত্রীদের এরকম বাড়তি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হতো না।
বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও নবীনগরসহ আশপাশের কর্মজীবী নারী-পুরুষরা অনেক দিনের ছুটি পেয়ে ঈদের ছুটির মতো বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। গতাকাল বৃহস্পতিবার ও আগের দিন বুধবার ঘরমুখো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড ছিল ঘাটে। যা ঈদের ভীড়ের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। যাত্রীদেরকে একে অপরের সাথে গা লাগিয়ে গাদাগাদি করে ট্রলারে ও ফেরিতে নদী পার হতে দেখা গেছে। যেহেতু করোনা ভাইরাস সংক্রামক রোগ এবং কাশির মাধ্যমে একজনের দেহে থেকে আরেকজনের দেহে প্রবেশ করতে পারে । সেজন্য এরকম যাত্রা খুবই বিপদজ্জনক।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন