২৯ মার্চ ১৯৭১। পাবনা সদরের মালিগাছা ইউনিয়নের পাবনা-রাজশাহী মহাড়কের জিয়ালগাড়া নামক স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান স্থানীয় জোতকলসা গ্রামের যুবক গহের আলী মন্ডল। একাত্তরে স্বামীকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিক প্রতিবন্ধি দুই সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার স্ত্রী শুকজান বেগম ৬৫।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গহের আলী মন্ডলের নাম শহীদের তালিকায় স্থান পায়নি। বয়স্ক ভাতা আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কার্ডের চালে দুই সন্তান নিয়ে স্ট্রেচারে ভর করে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন একাত্তরে স্বামী হারানো এই নারী শুকজান বেগম।
পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ৫৫ বছরের ইকরাম আলী মন্ডল মানসিক ভারসাম্যহীন আর ৫২ বছরের আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধি। দুই সন্তানের মা গহের আলী মন্ডলের স্ত্রী শুকজান বেগম স্ট্রেচারে ভর করে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলিতে স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলে সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন এই বৃদ্ধ নারী।
শুকজান বেগম দাবি করেন, পথহারা পাকিস্তানী সৈন্যদের দমন করতে তার স্বামী এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে গেছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি প্রাণ হারান। তার প্রাণের বিনিময়ে এই পরিবারে কিছুই জোটেনি। শুনেছি অনেকেই অনেক কিছু পায়, আমি বা আমার ছেলেরা কিছুই পাইনি। মৃত্যুর আগে স্বামী যে শহিদ হয়েছিল সরকারি তালিকায় তা দেখে মরতে চাই।
প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক ইয়াছিন আলী জানান, গহের আলী মন্ডল দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন। কেন তিনি শহীন নন। দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সরকারি বেসরকারি ভাবে এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। অসহায়, দারিদ্রতার কষাঘাতেই জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন গহের আলী মন্ডলের পরিবার। গহের আলীর স্ত্রী অর্থাভাবে শুকজান বেগম চিকিৎসা নিতে পারছেন না।
স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, পথহারা পাকিস্তানী বাহিনীর একটি দল জিয়ালগাড়া বিলের মধ্যে গমের ক্ষেতে পালিয়ে ছিল। সকালে গহের আলী মাঠে এসে দেখতে পায় পাকিস্তানী সৈন্যদের। এ সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে চলে যেতে বলে। কিন্তু গহের আলী উল্টো চিৎকার দিয়ে লোক জড়ো করে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পাকিস্তানী সৈন্যরা গুলি ছোড়ে। এতে গহের আলী মন্ডল ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। সরকারি ভাবে এই পরিবারের দিকে একটু নজর দেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মালিগাছা ইউনিয়ন কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এবাদত আলী বলেন, ২৯ মার্চ ১৯৭১। এদিনে পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা আত্মরক্ষার্থে জিয়ালগাড়া বিলের মধ্যে গমে ক্ষেতে গিয়ে পালায়। গ্রামবাসী গহের আলী প্রাতকর্ম সারতে গিয়ে তাদের সামনে পড়ে যায়। এ সময় গহের আলী মন্ডলকে তারা গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা এবাদত আলী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের শহীদ বা মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার মধ্যে গহের আলী মন্ডল পড়েন না।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন