'করোনা আমগোরে ভাত দিবো না। আমগোর কাজ কইরা পেটের ভাত জোগাড় করতে অইবো। বাজার করতে অইবো। তয় পোলাপান খাইবো। আমি খাইমু। এর লাইগা বাজারে আইছি।'
আজ শুক্রবার বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের দিগদারি গ্রামের দিন মজুর ছামিউল হক (৫৫)। একই কথা শোনান খনচেপাড়া বাজারে আসা বেটারি চালিত অটোবাইক চালক সোলায়মান মিয়া (২৫)। তার বাড়ি ওই বাজের পাশেই।
তিনি বলেন, দুদিন থাইকা যাত্রী কম। চাল ডাল কিনতে অইবো। অহন গাড়ি না চালাইলে চলমু ক্যামনে? এমন অজুহাত দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকের ভিড় জমেছে স্থানীয় খনচেপাড়া বাজারে। একই চিত্র পার্শ্ববর্তী চৌরাস্তা বাজারেরও। এখানে দাঁড়ালে দেখা যায় সাজু মিয়া নামে এক মুদির দোকানে লোকের ভিড়। এই ফাঁকে চাল, ডালসহ কিছু নিত্যপন্যের মূল্য বাড়িয়ে নিচ্ছেন এই দোকানদারসহ গ্রামাঞ্চলের বাজারের দোকানদাররা।
অনেকটাই বলা যায়, করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা। তেমনি করোনার অজুহাতে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে গ্রামাঞ্চলের বাজারের দোকান মালিকরা। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে লোকজন। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং ও প্রচার প্রচারণাসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি না করায় সচেতন লোকজন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। এমনটাই জানালেন ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমি একজন গ্রাম্য পল্লী চিকিৎসক। অনেকভাবেই বোঝাই। কিন্তু বুঝতে চায় না।
থানা সূত্র সূত্রে জানা যায়, একের অধিক লোক সমাগম দেখলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া মাইকিং করা হচ্ছে।
থানার ওসি মোহাম্মদ রুহুল আমিন তালুকদার জানান, পুলিশ সব সময় বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে পৌরশহরে গুরুত্ব পূর্ণস্থানে হাত ধোয়ার জন্যে পানি ও বেসিন বসানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। এখনো ১৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। তাদের ওপর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ২০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা সন্দেহ হলে তাদেরকে প্রথমে এখানে রাখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার কলের কণ্ঠকে জানান, প্রত্যেক দিন বিভিন্ন এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পৌর শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে।
তবে উপজেলার খনচেপাড়া, গড়খোলা, কর্ণঝোড়া, ভায়াডাঙ্গা, বালিজুরি ও রানীশিমুলসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে চা ও মুদি দোকানগুলোর সামনে মানুষের ভিড়। এদের মধ্যে উঠতি বয়সের যুবকের সংখ্যাই বেশি। তাদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার কথা বললেও অনেকে বুঝতে অক্ষম। কেউ বা মানতে নারাজ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন