ঘুষের টাকা না পেয়ে সহকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সেই প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে দায়ের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অভিযোগকারীদের উপস্থিত থাকতে চিঠি পাঠান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল হক প্রধান। আগামী ৪ মার্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে বলে পত্রে জানান তিনি।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল দাবিকৃত ঘুষের ৮লাখ টাকা না পেয়ে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে সহকারী শিক্ষক (গণিত) মনোয়ারুল ইসলামের বেতন বন্ধ করেন। কোন ধরনের নোটিশ ছাড়াই বেতন বন্ধ করায় বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। এ নিয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্রেকিংনিউজডটকমডটবিডে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার ফলে নড়াচাড়া দিয়ে উঠে শিক্ষা বিভাগ। একই সাথে দুর্নীতির তদন্তে মাঠে নেমে পড়েন সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ঊর্ধ্বতন মহলে নড়াচাড়া দেয়ায় বিদ্যালয়টির অভিভাবক ও স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষকের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ২২ জানুয়ারি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে গনপিটিশন দাখিল করে বিচার দাবি করেন।
এ দিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত নিউজের প্রতিবাদ প্রকাশ করেন। একই সাথে বেতন বন্ধের প্রতিবাদে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করা শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলামকে সপরিবারে এলাকা ছাড়ার হুমকী দিচ্ছেন বলে ওই শিক্ষক দাবি করেন। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বাদি হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৫ জানুয়ারি আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৯৭১) দায়ের করেন।
বৃদ্ধ বাবা মাসহ পরিবারের সদস্যদের জিবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ শিক্ষকতা পেশার বন্ধ করা বেতন সচল করতে ও প্রধান শিক্ষকের অনীয়মের বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরুসহকারে সংবাদ প্রকাশ করেন। ফলে জেলা প্রশাসকের কাছে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল হক প্রধান উভয় পক্ষকে উপস্থিত থাকতে পত্র পাঠান। আগামী ৪ মার্চ বেলা ১১ টায় বিদ্যালয়ে এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।
এমপিও সিটের অপর সহকারী শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ আলী বিদ্যালয়ে যোগদান না করেও তাকে প্রতি মাসে ২৪ দিন উপস্থিত দেখিয়ে ভুয়া বেতন ভাতা দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল। তবে উক্ত শিক্ষক ওয়াহেদ আলী কালীগঞ্জ উপজেলায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাঠ সহায়ক পদে নিয়মিত কর্মরত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। সেক্ষেত্রে একই ব্যক্তির বিপরীতে দুই পদে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে কৌশলী প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষক পদ থেকে ওয়াহেদ আলীকে অব্যহতি দেয়ার দাবি জানালে তিনি তা প্রত্যাখান করেন। তৎকালীন ওয়াহেদ আলী দাবি করেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া তো দূরের কথা। তিনি কখনই ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে যোগদানই করেননি।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়াও ভোটহীন মনগড়া কমিটি গঠন ও বিদ্যালয়ের সম্পদ লুন্ঠনের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে গনপিটিশন দায়ের করেন। এসব অভিযোগের প্রক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন