ঝিনাইদহে মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারের বেদিতে হিন্দি গানের সঙ্গে তরুণ-তরুণীর জুতা পায়ে নাচের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জেলার সচেতন মহল। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঝিনাইদহ থিয়েটার সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশিত ‘ক্ষেপা পাগলার পেচাল’ নাটকের দৃশ্যে এমন চিত্রের দেখা মেলে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে রাতে প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক কমকর্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে ঝিনেদা থিয়েটারের পরিবেশনায় নাটক চলছিল। এ সময় হঠাৎ করেই নাটকের এক পর্যায়ে জুতা পায়ে পাঞ্জাবি-টুপি পরে হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ শুরু করে কয়েকজন তরুণ-তরুণী। সে সময় অনেকেই মোবাইল ফোনে দৃশ্য ধারণ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনের।ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে ফেসবুক পেজে বাবু কাজল নামে একজন লিখেছেন, ‘২১ শে ফ্রেব্রুয়ারিতে কেন এই গান, নাচ রাখতে হবে? কি এমন নাটকের দৃশ্য ছিল যা সমগ্র জাতিকে অপমান করলো? আমাদের রুচি নেই, যা বোধটুকু ছিল সেটা ও কিছু ছাগলের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।’
ইমন কুমার লিখেছেন, ‘বাংলার ছেলেদের কাছে এমনটা আশা করা যায় না, শহীদ মিনারে এসব নাচ তাও আবার জুতা পরে, ভাবতে অবাক লাগছে। রাজাকার ছেলে মেয়ে হলে এটা করতে পারি।’
অন্তর হোসেন রিজু লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে, কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে এগুলো কাম্য নয়।
এ বিষয়ে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শান্ত জোয়ারদার জানান, যে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা পেয়েছি, বাংলায় কথা বলছে পারছি তাদেরকে চরম অবমাননা করা হলো এই কাজের মধ্য দিয়ে। আমরা সকলে মিলে যে প্রভাত ফেরি করলাম, পুষ্পমাল্য অর্পণ করলাম, তার আর কোনো অর্থ থাকলো না। আমাদের ভাষা শহীদদের অপমান করা হলো, বিকৃত করা হলো সাংস্কৃতিকে।
তিনি আরও বলেন, একটা স্বাধীন দেশে এমন বিকৃত আচরণ কখনই মেনে নেয়া যায় না। প্রশাসনের কাজে দাবি জানাব অতিদ্রুতই যেন এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে এবং যারা শহীদ মিনারে জুতা পায়ে প্রবেশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। এর ব্যত্যয় হলে ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপী চরম আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী জানান, ফেসবুকে যখন দেখলাম জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে নাচ-গান হচ্ছে, তখন চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসল। যারা মার্তৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিলেন, তাদের স্মরণে নির্মিত বেদিতে এমন চিত্র কখনই কাম্য নয়। ‘ক্ষেপা পাগলার পেচাল’ নামের এই নাটকের পরিচালক ও ঝিনেদা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ জানান, আমাদের নাটকের মূল বিষয় ছিল বিভিন্ন সময় শহীদ মিনারে যে পার্টি, জন্মদিন, গরু-ছাগল চরে বেড়ায় এসব নানা বিষয় তুলে ধরা, যাতে করে শহীদ মিনারের কোনো অবমাননা না হয়। কিন্তু দেখা গেছে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি সংগঠন এই শহীদ মিনারেই হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করেছে। এর মধ্যে ‘বিউটিফুল ঝিনাইদহ’ নামের ফেসবুক পেজের একজন অন্যতম উপদেষ্টার জন্মদিনের পার্টি করা হয়েছে এই শহীদ মিনারের বেদিতে। নাটকের চরিত্রটি তাদের বিরোধী হওয়ায় এমন ষড়যন্ত্র করেছে তারা। নাটকের সম্পূর্ণ ভিডিও না দিয়ে আংশিক প্রচার করেছে। এ বিষয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে আগামী সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আদালতে এই ফেসবুকে পেজের অ্যাডমিনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করবো।
তবে এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, ঝিনেদা থিয়েটারের একটা নাটক চলছিল তখন এমনটি হয়েছে। তাৎক্ষণিক নাটকের দৃশ্যে জুতা পায়ের বিষয়টা আমার চোখে পড়েনি। তবে ফেসবুকে দেখলাম। আমি কথা বলবো নাটকের পরিচালক ও সংগঠনের সঙ্গে। নাটকের চরিত্রে হিন্দি গানে সমস্যা নেই কিন্তু জুতা পায়ে প্রবেশটা ঠিক হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ মোবাইল ফোনে জানান, শহীদ বেদিতে জুতা পায়ে প্রবেশ করা ঠিক হয়নি। সংগঠনের সবাইকে নিষেধ করবো যেন এমনটি আর না হয়।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন