এখন থেকে প্রায় ছয় মাস আগে, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে কালের কণ্ঠে আমি লিখেছিলাম ‘ধেয়ে আসছে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো।’ সেই নিবন্ধে আমি উল্লেখ করেছিলাম, বাংলাদেশ উন্নয়নের এমন একপর্যায়ে রয়েছে যে সেখানে অর্থনীতির ভালো-খারাপ উভয় প্রবণতা যুগপৎ বিরাজমান। অর্থনীতির অবস্থা (State of the economy) বোঝার জন্য বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করা হয়। সংশ্লিষ্ট অঙ্গনে সূচকের অবস্থান, গতিও মাত্রাদৃষ্টে বোঝা যায় অর্থনীতির ওই অঙ্গন কী অবস্থায় রয়েছে এবং কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে। সূচকগুলোর গতি-মাত্রা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা জন্মে। যদি দেখা যায় প্রায় সবগুলো সূচক ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং তারা ঠিক পথে এগোচ্ছে, তবে বুঝতে হবে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা সন্তোষজনক। যদি বেশ কয়েকটি সূচকের ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থা পরিদৃষ্ট হয়, তবে পাঠকের মনে ধারণা জন্মাবে যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সামগ্রিকভাবে সন্তোষজনক নয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে সন্তোষজনক পর্যায়ে ছিল। সবচেয়ে বহুল আলোচিত সূচক, জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ের ইতিবাচক গতি-মাত্রা অবহিতজনের মনে তৃপ্তির জন্ম দিয়েছিল যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন কারণ নেই। অর্থনীতি ভালো আছে। শাসকদলের সমর্থকরা সমস্বরে সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের জয়গান করতে থাকে। উচ্চ পদে আসীন রাজনীতিবিদ এবং নির্বাহীরা তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে এমনভাবে কোরাস গাইতে থাকেন যে জনগণের একটি অংশ বিশ্বাস করতে শুরু করে এখন আর পেছনে ফিরে দেখতে হবে না। গতি বাড়িয়ে দেশ শুধু এগিয়ে যাবে। অচিরেই মধ্যম আয়ের সীমা পেরিয়ে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে বাংলাদেশ। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম যে সুব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বাস্তব অবস্থা ছিল কিছুটা ভিন্ন রূপ। সব সূচকের গতি-মাত্রা সন্তোষজনক ছিল না। অর্থনীতির অবস্থান নির্ণয়ক সূচকগুলো সাধারণত সামষ্টিক (macro featured) হয়ে থাকে। সম্পর্কযুক্ত সূচকগুলোর গতি-মাত্রার মধ্যে একটা প্যাটার্ন লক্ষ করা যায়। যেসব সূচকের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক থাকে, তারা একই দিকে ধাবিত হয়। একটি বাড়লে অন্যটিও বাড়ে, একটি কমলে অন্যটি কমে। আর যাদের মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক থাকে তাদের গতিপথ বিপরীতধর্মী। অর্থাৎ একটি এদিকে গেলে অপরটি বিপরীত দিকে যায়। সম্পর্কযুক্ত সূচকগুলো নির্ভরতা এড়িয়ে স্বতন্ত্র সত্তায় (Stand alone) দাঁড়িয়ে থাকে না। যদি কোনো সময় তাদের বিযুক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে, যা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। যেমন—জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। উৎপাদনের কাঁচামাল, এনার্জির (বিদ্যুৎ, গ্যাস) চাহিদা বাড়বে, অর্থ সরবাহ বাড়বে। দ্রব্যমূল্যও কিছুটা বাড়বে। খাদ্যাভাব কমবে, জীবন যাপনে স্বস্তি এবং আরাম বাড়বে, পুষ্টি সংকট হ্রাস পাবে। বাংলাদেশের জিডিপি শনৈঃশনৈঃ করে বেড়ে চলছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরূপ কর্মহীন প্রবৃদ্ধি স্বস্তিদায়ক নয়। এ ধরনের প্রবৃদ্ধিকে বলা হয় Jobless growth। এ দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতি পেলে বা দৃশ্যমান হলে এমন বেকারত্ব থাকার কথা নয়। খাদ্যাভাব থাকার কথা নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলার কথা। খাদ্যশস্যের উৎপাদন আগের মতো বাড়ছে না। সামান্য দৈব দুর্যোগ দেখা দিলে খাদ্যশস্যের সরবরাহ দারুণভাবে কমে যায়। দেশে খাদ্যের আকাল দেখা দেয়, খাদ্যশস্যের দাম চোখ রাঙিয়ে বেড়ে যায়। খাদ্য নিরাপত্তার অভাব প্রকটভাবে অনুভূত হয়। বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে এমনটি ঘটার কথা নয়। তবু ঘটছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক। মনে হয় আমাদের তথা উপাত্ত সরবরাহ, সংকলন ও প্রকাশের মধ্যে কোথাও গোলমাল রয়েছে। তাই আমরা সব কিছু নিখুঁতভাবে মেলাতে পারছি না।
অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছিলেন যে আমাদের প্রকাশিত সূচকগুলো অর্থনীতির কালোত্তীর্ণ ছকে মেলানো যাচ্ছে না। একটি বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে সূচকগুলো যে সঞ্চারপথে (Locus) পরিভ্রমণ করার কথা বাংলাদেশ অর্থনীতির সূচক যে পথে এগোচ্ছে না। যে সূচক তাল মিলিয়ে সামনে এগোনোর কথা সে সূচক থিতু হয়ে আছে; কখনো উল্টো পথ ধরে পিছে চলে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টিতে থাকার লক্ষ্যে অনেক পদস্থ নির্বাহীরা এ সত্য মেনে নিতে চান না। কোনো সূচকের গতি-মাত্রা সন্তোষজনক না হলে সেই সূচককে ঘষে-মেজে পছন্দের গতি-মাত্রায় আনা হয় অথবা এই সূচকের ব্যাপারে চুপ থাকা হয়। ২০১৭ সালে দেশের খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ তলানিতে নেমে গেলেও জনগণকে সে সম্পর্কে জানানো হয়নি, কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি আড়ালে রাখতে চেষ্টা করেছে। সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও কর্তৃপক্ষ বলেছে যে এতে খাদ্য সরবরাহ বা বাজারের ওপর প্রভাব পড়বে না। খাদ্যের মূল্য হু হু করে বেড়ে গেলে প্রকৃত তথ্য গণমাধ্যমের বদৌলতে প্রকাশ পেল। কর্তৃপক্ষ তখন চুপ করে রইল। তাদের হয়তো যুক্তি ছিল, সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে জনরোষ নিরসন হবে। প্রকৃত তথ্য জানলে লোকজন দুঃখ পাবে, তবে এর জন্য বড় আন্দোলন কিংবা বিক্ষোভ হবে না। তাদের যুক্তি ঠিক ছিল।
বর্তমান অর্থবছর শুরু হওয়ার স্বল্প সময় আগে এবং বছর শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে। বিশ্লেষকের মতে, ‘এর অন্যতম কারণ হচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ। এক দেশ অন্য দেশের ওপর তালাতালি করে শুল্ক আরোপ করছে। যার ফলে বিশ্ববাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নিজের দেশে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় লিপ্ত দেশগুলোতে চাহিদা হ্রাসের সঙ্গে আমদানি কমে যাচ্ছে।’ এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক বিদেশের বাজারে বিক্রি করা ক্রমেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
মন্দার প্রভাব পড়েছে চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে। করোনাভাইরাসের আগেই চীনের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমে দাঁড়িয়েছিল ৬.২ শতাংশ। সতর্কবাদীদের দৃষ্টিতে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশের কাছাকাছি, যা গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকংয়ের অবস্থাও পড়তির দিকে। ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকসামগ্রীর রপ্তানি কমে যাওয়ায় জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির পতন ঠেকাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। অর্থবছরের শুরু থেকে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট ২০২০ মাস থেকে বিশ্বমন্দার আঁচ লাগতে থাকে বাংলাদেশের গায়ে। মনে পড়ে তখন লিখেছিলাম, ‘ব্যাবসায়িক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিকটবর্তী দেশগুলোর অর্থনৈতিক সমস্যার আঁচ যে বাংলাদেশের গায়ে লাগবে না এমন কথা নিশ্চিন্তভাবে বলা যায় না। ‘অর্থনীতির সুস্বাস্থ্য রাখার লক্ষ্যে বিষয়টির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজন রয়েছে।’
একটি দেশের অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থার মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন ঘটে সে দেশের শেয়ারবাজারের স্বাস্থ্যচিত্রে। মন্দার আঁচড় সাধারণত প্রথম দিকে লাগে পুঁজি বাজারের মতো স্পর্শকাতর অঙ্গনে। পুঁজি বাজারের বড় বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন নিয়মিত তাঁদের বিনিয়োগের ওপর লাভ-ক্ষতির সম্ভাবনা বা আশঙ্কা খতিয়ে দেখেন। সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতির আলোকে তাঁরা বিনিয়োগ বাড়ানো-কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যদি তাঁদের দৃষ্টিতে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নড়বড়ে মনে হয়, তবে তাঁরা নতুন বিনিয়োগ করতে চান না; বরং পুরনো বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে প্রয়াসী হন। তখন পুঁজি বাজারের সূচকে পতন ঘটতে থাকে। বেশ কয়েক মাস ধরে পুঁজি বাজারে সূচকের পতন ঘটছে। সেপ্টেম্বর ২০১৯ মাসে আমি যখন অদূরভবিষ্যতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের ওপর লিখেছিলাম তখন সূচক ছিল পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার পাঁচ শর আশপাশে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কর্তৃপক্ষের নানা প্রণোদনায়ও বিধ্বস্ত শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল সুস্বাস্থ্যে ফেরানো যাচ্ছে না।
ব্যাংকিং ও আর্থিক (Financial) সেক্টরকেও টেনে তোলা যাচ্ছে না। এখানে যে লুটপাট হয়েছে তা অবর্ণনীয়। বলা যায়, ব্যাংকগুলো রক্তশূন্য, মৃতপ্রায়। লুটেরারা টাকাকড়ি নিয়ে হয় বিদেশে চলে গিয়েছে, নয়তো ক্ষমতাধরদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে সে টাকার শ্রাদ্ধ করছেন। ব্যাংকের পরিচালকরা এবং লুটেরা গ্রাহকরা যে ঋণ নিয়েছেন তার এক বিরাট অংশ খেলাপি এবং কুঋণ হয়ে গেছে। এ অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ফলে ব্যাংকগুলো প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন ঘাটতিসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। এ কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর এবং দেশের ‘রেটিং’ অনেক নিচে নেমে গেছে। ব্যাংকে টাকা রাখতে আমানতকারীরা ভয় পাচ্ছেন। যেখানে এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চল (দেশগুলো) খেলাপিঋণের হার কমিয়ে এনেছে, সেখানে বাংলাদেশে খেলাপিঋণের হার ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। ২০১১ সালে খেলাপিঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা; ২০১৯ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশি ব্যাংকের এলসি গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত হতে পারে। দেশের জন্য তা হবে এক মহাসংকট।
আমাদের উন্নয়ন অনেকাংশে ব্যাংক সমর্থিত উন্নয়ন (Bank Led Development)| দেশের আমদানি-রপ্তানি বহুলাংশে ব্যাংকের আর্থিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। তারল্যশূন্য ব্যাংকগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আগের মতো ঋণ দিতে পারছে না। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবে এ ব্যাপারে আড়ষ্ট। ঋণের অভাবে বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাঁদের কর্মকাণ্ডে গতি কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে আমদানি-রপ্তানি, ভ্যাটসহ সরকারের মোট রাজস্ব প্রাক্কলিত মাত্রায় আদায় হচ্ছে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বেসরকারি খাত স্তিমিত হয়ে পড়বে, সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টের (GDP) প্রবৃদ্ধি আশাপ্রদ না-ও হতে পারে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাত আরো কাবু হয়ে পড়বে।
সব কিছু মিলে করোনাভাইরাসের আগেই আমাদের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছিল। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা যে অর্জিত হবে না তা সহজে ধরা পড়ে। উচ্চমাত্রার রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন নিয়েও বিশাল অঙ্কের ঘাটতি বাজেট পাস হয়েছিল। রাজস্ব আয় পিছিয়ে পড়ার কারণে হয় ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে অথবা সরকারকে বড় ধরনের ব্যয় সংকোচন কর্মসূচি (Austerity) গ্রহণ করতে হবে। আসলে রেমিট্যান্স আয় ছাড়া বাকি সব সূচকের নেতিবাচক প্রবণতা দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হয়ে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা অদূরভবিষ্যতে ফেরত পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। মসলা আর পেঁয়াজের বাজারই বলি কিংবা চিনি-চালের বাজার বলি, কোনোটিতে শিগগিরই সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে হয় না। এগুলো সিন্ডিকেট বা দুষ্টচক্রের নিয়ন্ত্রণে থেকে যাবে। ভোক্তারা অসহায়। সঞ্চয় থেকে পাওয়া মুনাফাও কমে গেছে। অগত্যা খাওয়াদাওয়া তথা পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এমন অসন্তোষজনক অবস্থা সম্যক উপলব্ধি করে অর্থমন্ত্রী সাহস করে বলেছেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। দেরিতে হলেও স্পষ্টভাবে এই সাদামাটা সত্য কথা বলার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। মিথ্যা আশ্বাসে নাগরিকরা বিভ্রান্ত হয়। তারা কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে না। অর্থনীতির অমোঘ সত্য হচ্ছে, বাস্তব অবস্থাকে ঢেকে রাখা যাবে না। কোনো না কোনো অঙ্গনে, অর্থনীতির পরিভাষায় বাজারে, প্রকৃত সত্য প্রকাশ হবেই। অর্থনীতির সমীকরণ কাঠামো বড়ই সুঠাম। অস্বীকার করলেও অবাধ্য চলক মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই প্রকৃত অবস্থা স্বীকার করে নিয়ে সবাই মিলে যথাসময়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। সামান্য পরিমাণে হলেও জাতি উপকৃত হবে।
লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন