পাকিস্তানের তত্কালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিলেন— ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। পাকিস্তানের শাসকদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে জিন্নাহর ওই ভাষণেই।
কিন্তু তাতে কি? ফুঁসে উঠলেন বাংলার ছাত্রসমাজ। বাংলার ছাত্রসমাজ এই ঘোষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকার রাজপথে। শোষকদের চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার দাবিতে ফুঁসে উঠেছিলেন তারা। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার ছাত্র-জনতা। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত করে সারা পূর্ববাংলার রাজপথ।
সেদিন মায়ের ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে রাজপথ রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করেছিলেন বাংলার ছাত্র সমাজ। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন কিন্তু মাথা নত করেননি। তাই একুশ ‘মানে মাথা নত করা নয়’, একুশ মানে ‘রুখে দাঁড়ানো’, ‘লড়াই করা’, রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করা, অন্যায় মেনে না নেয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠা...।
শুধু মায়ের ভাষার রক্ষা নয়, একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালিকে শিখিয়েছিল দাবি আদায়ের লড়াই করতে। রাজপথ তপ্ত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে যে নামগুলো রচনা করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি, তাদের আত্মদানের স্মৃতিকে মনে রাখা প্রজন্মের দায়িত্ব।
তবে সেদিন (১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি) নিজের অধিকার আদায় সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এসেছিলেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখোর করে তুলেছিলেন রাজপথ। শাসকের বুলেটেও সেই শ্লোগান রোধ করতে পারেনি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সড়ক ধরেই আমরা ১৯৭১ সালে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বাধীনতা পেয়েছি। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সেদিন রোপিত হয়েছিল মহান স্বাধীনতার বীজ। অমর একুশের রক্তসিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা অর্জন করেছি চূড়ান্ত বিজয় ও লাল সবুজ পতাকা শোভিত নতুন মানচিত্রের বাংলাদেশ।
শুধু স্বাধীনতা নয়, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন সবই আমাদের শিখিয়েছেন সূর্যসন্তানরা। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে ভাষা শহীদরা জীবন দিয়েছিল তাদের আত্মত্যাগকে আমরা কি যথাযথ মর্যাদা দিতে পেরেছি, বা পারছি?
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন