ফরিদপুরে এক ঘর থেকে স্বামী রাজীব বিশ্বাস (৩৪) ও স্ত্রী স্মৃতি বণিকের (২২) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে কোতয়ালী থানায়।
মঙ্গলবার দুপুরে মৃত স্মৃতি বণিকের ভাই নিলয় বণিক বাদী হয়ে এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে রাজীব ও স্মৃতির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন স্বামী।
গত সোমবার রাতে শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার লঞ্চ ঘাট এলাকার একটি ভাড়া বাড়ী হতে রাজীব ও স্মৃতির লাশ উদ্ধার করা হয়। স্মৃতির মৃতদেহ ঘরের শয্যায় শায়িত অবস্থায় এবং রাজীবের মৃতদেহ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচানো ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত স্মৃতি বণিক (২২) গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাটিকামারী উত্তর পাড়া গ্রামের খোকন বণিকের মেয়ে। রাজীব বিশ্বাস (৩৪) গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার উজানি ইউনিয়নের খালখোলা গ্রামের বাসিন্দা মৃত নিরাঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে।
মৃত স্মৃতির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে রাজীব বাটিকামারি স্কুল এন্ড কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষকের চাকরী নেন। ওই স্কুলেই পড়তো স্মৃতি। একই সাথে রাজীব স্মৃতির গৃহশিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকেই দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে পরিবারের অমতে স্মৃতি বিয়ে করে রাজীবকে। এর মাস ছয়েক পরে স্মৃতি তার মামাদের কাছে গিয়ে বিয়ে মেনে নিয়ে সনাতন রীতি অনুযায়ী বিয়ে দেয়ার দাবী জানায়। ভাগ্নীর সুখের কথা চিন্তা করে স্মৃতির মামারা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী অনুষ্ঠান করে রাজীবের সাথে স্মৃতির বিয়ে দেন। এরপর থেকে তারা ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার শওকত সিকদারের এক তলা পাকা ভবনে ভাড়া থাকতেন। স্মৃতি মাঝে মাঝে মা ও মামাদের কাছ থেকে টাকা চেয়ে আনলেও পারিবারিক অশান্তির কথা তাদের কাছে কখনো বলেননি।
স্মৃতির মাসী বাসনা পোদ্দার জানান, ঘটনার দিন স্মৃতির প্রতিবেশীরা তাকে প্রথমে জানায় যে রাজীব স্মৃতিকে মারধর করেছে। ওদের ঘর তালাবদ্ধ। আপনাদের ওইখানে বা বাবার বাড়ি গিয়েছে কিনা। এরপর তিনি সহ বাড়ির মালিক দরজা ভাঙার চেষ্টা করে না পেরে জানালা খুলে দেখতে পান রাজীব সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে আর স্মৃতি নিথর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। পরে তারা পুলিশকে জানালে পুলিশ পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
রাজীবের মামা বিকাশ বিশ্বাস জানান, রাজীব ফরিদপুর শহরে টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্মৃতি ফরিদপুরের সারদা সুন্দরি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ আলম বলেন, ময়নাতদন্তের পর দুটি মৃতদেহ দুই পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। স্মৃতির মৃতদেহ গ্রহণ করেন তারা ভাই নিলয় বণিক অপরদিকে রাজীবের মৃতদেহ গ্রহণ করে তার মামা বিকাশ বিশ্বাস।
ওসি বলেন, ধারণা করা করা হচ্ছে রাগারাগির এক পর্যায়ে মাথায় আঘাত করায় মারা যান স্মৃতি। স্মৃতির মাথার পিছনের দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্মৃতির মৃত্যুর পর রাজীব গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন