ফুটবলের ডাক্তার নামে পরিচিত গওছেল আজম তরফদার (৫০)। সদা হাস্যোজ্জ্বল সহজ সরল ও মিষ্টভাষী এ মানুষটা ফ্রি ফ্রি প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ায় যেন তার কাজ। যেখানে ফুটবল খেলা, সেখানেই ছুটে যান তিনি। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তা না, এলাকাবাসীর চিকিৎসা ও পড়াশুনার জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করে থাকেন। নানা
এমন মহৎ কাজের জন্য তিনি এখন ‘ফুটবলের ডাক্তার’ নামে পরিচিত পেয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মান্দা থানার মৈনম ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ কিনতে তার পক্ষে খরচ কিছুটা বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। সহযোগিতা পেলে চিকিৎসা সেবার মান আরও বাড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।
কিশোর বয়স থেকে ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। ফুটবলের প্রতি ভালো লাগা থেকেই খেলতে থাকেন এ খেলা। এলাকায় ভালো একজন খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। গত ৮ বছর আাগে ফুটবল খেলার সময় দৌঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে বাম পায়ের হাঁটুতে ব্যথা পান। তারপর এক্সেরে করে দেখেন হাঁটুর ভেতরের হাড় ভেঙে গেছে। এরপর থেকে খেলা বন্ধ। ফটুবল খেলা বন্ধ হলেও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার যেন কোনো কমতি নেই। আর ভালোবাসা থেকেই যেখানে ফুটবল খেলা হয় সেখানে তিনি ছুটে যেতেন। নিজ খরচে খেলোয়াড়দের তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
জয়পুরহাট, রাজশাহী, নওগাঁ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল খেলার সংবাদ পেলে তিনি ছুটে যান। সেখানে আহত খেলোয়াড়দের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুস্থ করে তুলেন। এছাড়া হাটে ও বাজারে ঘুরে ঘুরে তিনি বিনা পয়সায় সেবা দেন। গত কয়েকদিন আগে জেলার মহাদবেপুর উপজেলার হিন্দুবাগা মেলায় দুই দিনে প্রায় দেড়শতাধিক গরিব মানুষকে মিনি থেরাপি ও ব্যথানাশক স্প্রে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত ভাবে তিনি পুকুর ইজারা (লিজ) নিয়ে মাছ চাষ করে থাকেন। রমজানের সময় তিনি মাসজুড়ে এলাকাবাসীকে ফ্রি মাছ দিয়ে থাকেন। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। স্ত্রী মারা গেছে অনেক আগে। বড় ছেলে পরিবার পরিকল্পনায় চাকরি করেন, মেঝ ছেলে অটোরিকশা চালক ও ছোট ছেলে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কলেজে পড়াশুনা করে এবং মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা তাকে এ কাজ থেকে অনেকবার বিরত থাকার জন্য নিষেধ করলেও তা করতে পারেননি। ঘুমানোর সময়ও ফুটবল কাছে নিয়ে ঘুমান তিনি।
মান্দা থানার নুরুল্লাহবাদ গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ ওয়াহেদ আলী বলেন, গত এক বছর আগে ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে বাম পায়ে ব্যথা পান। এরপর থেকে হাঁটার সময় ব্যথা অনুভব করেন। দরিদ্র হওয়ায় পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। ব্যথা তেমন উপসম হয়নি। অনেক ওষুধ খেয়েছেন। মেলাতে এসে গওছেল আজম ভাইয়ের কাছ থেকে মিনি থেরাপি ও স্প্রে দিয়েছি।
ফুটবলের ডাক্তার গওছেল আজম তরফদার বলেন, গত ৮ বছর থেকে এ সেবা দিয়ে আসছি। তবে দুই বছর থেকে ‘ফুটবলের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছি। ফুটবল খেলার সময় খেলায়াড়রা যে ব্যথা পান সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। নিজ খরচে এ সেবা দিয়ে থাকি। বাড়ি থেকে যখন বের হই তখন ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়। কখন কোথায় মানুষের প্রয়োজন হয় বলা তো যায় না। নিজের ভালো লাগা থেকেই এ কাজটা করে থাকি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন