অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল, আমেরিকার সাথে ইরানের চলমান উত্তেজনা এবং সবশেষ চীনে করোনা ভাইরাসের মহামারি অস্থির করে তুলছে বাংলাদেশের ভোগ্য পণ্যের বাজার।
মূলত অস্ট্রেলিয়া, ইরান এবং চীন থেকে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। রপ্তানিকারক এ তিন দেশে অস্থিরতা কারণে আসন্ন রমজানে দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীরা। রমজান শুরুর এখনো চার মাস বাকি থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি এবং ছোলাসহ অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের বাজার চড়া।
মূলত ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ মাস আগেই ঋণপত্র খুলতে হয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। আর রমজানে যেহেতু পণ্য চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়, তাই ঋণপত্র খোলা হয় অন্তত ৬ মাস আগে। এবার'ও পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন আমদানিকারকরা।
ইতোমধ্যে কিছু কিছু আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে শুরু করেছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে অনেক পণ্য চলে আসবে। কিন্তু বর্তমানে পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অনেকটা অস্বাভাবিক। তাই রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা শঙ্কা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমাসের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'বিশ্ব বাজারে সব ধরনের ভোগ্য পণ্যের বুকিং রেট বেড়ে গেছে। ছোলা, চিনি এবং ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে তার মূল কারণ হলো পৃথিবীর কোনো দেশেই ভালো অবস্থানে নেই। বিশেষ করে যেসব দেশ ভোগ্য পণ্য রপ্তানি করে তারা আরো বেশি সমস্যায় রয়েছে। তবে এর পরেও যাতে রমজানের সময় কেউ কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে।'
রমজানে সবচেয়ে বেশি অস্থির হয় ছোলার বাজার। চলতি সপ্তাহে ছোলার বুকিং রেট প্রতি মেট্রিক টনে ৪০ মার্কিন ডলার কমলেও অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের কারণে ৬০০ ডলারের বুকিং রেট পৌঁছে গেছে সাড়ে সাতশ মার্কিন ডলারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়া ছোলার বুকিং এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলো। মাঝে ছোলার বুকিং রেট প্রতি মেট্রিক টন সাড়ে সাতশ ডলারে চলে গিয়েছিলো।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ জানান, অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ছোলা আমদানি বাধাগ্রস্ত না হলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর না হয় ছোলার দাম বেড়ে যাওয়ার আশংকা আছে।
ডাল মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা জানান, অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের মাত্রা কিছুটা কমায় এখন বুকিং দিতে শুরু করেছে। তাই প্রতি মেট্রিক টনে বুকিং রেট কমেছে ৪০ মার্কিন ডলার।
এদিকে ইরান-মার্কিন অস্থিরতায় বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে করোনা ভাইরাস জটিলতা।
খাতুনগঞ্জের আর এন এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ জানান, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় জটিলতায় গত ডিসেম্বরেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের বাজার ছিলো চড়া। আগে প্রতি মন সয়াবিন ২৮শ' টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে ৩৩শ' টাকায় পৌঁছে। তার সাথে আমেরিকা এবং ইরানের রাজনৈতিক বিরোধে তেলের দাম ছিলো নিয়ন্ত্রণহীন। এখন যখন দাম কমার কথা তখন চীনের করোনা ভাইরাস আবারো ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের পাশাপাশি পাম অয়েলেরও দাম বাড়ছে। আর রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পাম অয়েল।
অপরদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত চিনির বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আজো প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২২শ' টাকা দরে। রমজানে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিল মালিকদের সহযোগিতার কথা বলছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আলতাফ এন্ড ব্রাদার্সের মালিক আলতাফ হোসেন জানান, যদি মিল মালিকের চাহিদা অনুযায়ী চিনি সরবরাহ করে তাহলে হয়তো রমজানে দাম বাড়বে না। এছাড়া গত ৫ মাসের বেশি সময় ধরে অস্থিরতা চলতে থাকা পেঁয়াজের দাম এখন কিছুটা কমতির দিকে। কিন্তু করোনা ভাইরাস জটিলতায় আমদানি কমে গেলে দাম আবারো বাড়ার আশংকা রয়ে যাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন