নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের করা রিট সোমবার (২৭ জানুয়ারি) খারিজ করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি খারিজ করায় নির্বাচনে লড়তে তাবিথের আর কোনো বাধা রইলো না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। মিন্টু বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান।
আদেশে আদালত বলেছেন, তাবিথের সিঙ্গাপুরের ব্যবসা সংক্রান্ত যেসব নথিপত্র দাখিল করা হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ করা কর্তৃক প্রত্যায়িত নয়।
দীর্ঘ শুনানিতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন কামরুল হক সিদ্দিকী। তাবিথের পক্ষে ছিলেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও খায়রুল আলম চৌধুরী।
আদেশে আদালত বলেন, রিট আবেদনে তাবিথ আউয়ালের সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সংক্রান্ত যেসব কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে, তাতে সিঙ্গাপুরে তার ব্যবসার একটা সংশ্লিষ্টতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যেসব কাগজপত্র রিট আবেদনকারী দাখিল করেছেন, সেসব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রত্যায়িত না।ফলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
আদেশে আরও বলা হয়, তাছাড়া নির্বাচনের মাত্র চার দিন বাকি আছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে এসব কাগজপত্র যাচাই করে বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব না। যদি কোনো পক্ষ আগ্রহী থাকে তাহলে তবে নির্বাচনের পরেও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। এটি উভয় পক্ষের জন্যই ভালো হবে। অতএব আবেদনটি সরাসরি খারিজ করা হল।
আদালতের আদেশের পর সাবেক বিচারপতি মানিক বলেছেন, তিনি আপিল বিভাগে যাবেন। এটা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ নির্বাচনের পরেও আছে। আমরা আপাতত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবো।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় অবসরে যাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক এ রিট দায়ের করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। ওইদিন নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানি তিনজন শেয়ারহোল্ডার আছেন, তাদের একজন তাবিথ আউয়াল। অন্য দু’জন তার সহযোগী। তিনজন মিলে এই কোম্পানির সব শেয়ারের মালিক। এই কোম্পানির মূল্য দেখিয়েছে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে। এটা বিশ্বের যেকোনো দেশের টাকার অর্থেই এটা বেশ বড়। এই কোম্পানির কথা তাবিথ আউয়াল তার হলফনামায় উল্লেখ করেননি। আইন হচ্ছে তার ও তার পরিবারের সব সদস্যের সব সম্পদ হলফনামায় দেখাতে হবে। কিন্তু তাবিথ আউয়াল দেখাননি।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার মনোনয়ন আইনত বাতিল হতে বাধ্য। যদি আসলেই জিতে যায়, তাহলে কিন্তু উনি (তাবিথ) টিকতে পারবেন না, যদি তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়। কারণ নির্বাচনের পরেই এই প্রশ্ন আসবে, তখন যদি প্রতিষ্ঠিত হয় যে উনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন হফলনামায়, তাহলে উনি আর থাকতে পারবেন না। তার সিট শূন্য হয়ে যাবে। আবার নতুন নির্বাচন হবে।
প্রসঙ্গত, ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন