এক শাহীনের বদলে জেল খাটছেন আরেক শাহীন! হয়েছেন হত্যা মামলার আসামিও। পুলিশের ভুলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহীনুর রহমান শাহীনের সম্ভাবনাময় জীবনটা নষ্ট হতে চলেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভুল আরএমপির চন্দ্রিমা থানা পুলিশের। কিন্তু গত দুই মাসেও পুলিশ সেই ভুল সংশোধনের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে এক শাহীনের বদলে আরেক শাহীন জেলের ঘানি টানছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে রাজশাহী রেল ভবনের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ দফতরের ১৪ কোটি টাকার একটি টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জেরে নিযাম কাউন্সিলর আশ্রিত ক্যাডারদের মধ্যে বিরোধ বাধে।
এ বিরোধের জেরে সন্ত্রাসী সুজন, শাহীন ও সহযোগীরা মহানগর যুবলীগের সদস্য সানোয়ার হোসেন রাসেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার ভাই বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রাজাও সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর রাসেল মারা যান। রাজাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
নিহত যুবলীগ নেতা রাসেলের ভাই ও মামলার বাদী মনোয়ার হোসেন রনি অভিযোগে বলেন, তারা তার ভাই রাসেলের লাশের ময়নাতদন্ত ও লাশগ্রহণ শেষে দাফন-কাফনে ব্যস্ত থাকায় এবং গুরুতর আহত আরেক ভাই রাজাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে ওই দিন গভীর রাতে চন্দ্রিমা থানায় এজাহার দেন।
এর আগেই পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই জেএসসি পরীক্ষার্থী মুজাহিদ ও কামাল উদ্দিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহীনসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে। থানায় দেয়া এজাহারে নাম দেয়া না হলেও মামলা রেকর্ডের সময় পুলিশ নির্দোষ এই তিনজনকেও আসামি করে দেয়।
বাদীর আরও অভিযোগ, এজাহারে রাসেল হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত শিরোইল কলোনি এলাকার ডা. নাসিরের ছেলে শাহীন আহাম্মেদ শাহীনের নাম দেয়া হলেও পুলিশ নূর মোহাম্মদ সরদারের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র শাহীনুর রহমান শাহীনকেও আসামি করে।
গ্রেফতারের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহীন জেল খাটছেন। অথচ যুবলীগ নেতা রাসেলের হত্যাকারী সন্ত্রাসী শাহীন আহাম্মেদ শাহীনকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
এখনও গ্রেফতার হয়নি রাসেল হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী সুজনসহ ৯ জন। বাদী রনি বলেন, মূল আসামিরা নগরীর আশপাশেই থাকছে বলে আমরা শুনে থাকি অথচ পুলিশ বলছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে যুবলীগ নেতা রাসেল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মহানগর যুবলীগসহ এলাকাবাসী একাধিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন নগরীতে। এলাকাবাসী রাসেল হত্যায় সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী সুজনসহ পলাতক ৯ আসামির ছবি দিয়ে যে পোস্টার ছেপে নগরীর দেয়ালে দেয়ালে সাঁটিয়েছেন, তাতে শিরোইল কলোনির ডা. নাসিরের ছেলে সন্ত্রাসী শাহীনের ছবি রয়েছে।
ওই পোস্টারে দুই জেএসসি পরীক্ষার্থী মুজাহিদ, কামাল উদ্দিন ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহীনের নাম নেই।
নিহত রাসেলের ভাই মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রাজা বলেন, যে শাহীন জেল খাটছেন-এই শাহীন সেই সন্ত্রাসী শাহীন নয়। আমরা পুলিশকে বারবার বলেছি– গ্রেফতার হওয়া শাহীনুর রহমান শাহীন ঘটনায় জড়িত নয়।
কিন্তু পুলিশ এখনও রাসেল হত্যায় জড়িত সন্ত্রাসী শাহীন আহাম্মেদ শাহীনকে ধরতে পারছে না।
এদিকে কারাগারে থাকা শাহীনুর রহমান শাহীনের বাবা নূর মোহাম্মদ সরদার অভিযোগে বলেন, তার ছেলে ঘটনার দিন মাস্টার্সের ফিল্ড ওয়ার্কের কাজে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার সময়। এ সময় পুলিশ মহল্লার মোড়ে যাকে পেয়েছে তাকেই তুলে নিয়ে গেছে। নাম-ঠিকানা যাচাই না করেই পুলিশ তার ছেলে শাহীনকেও তুলে নিয়ে যায়।
আমরা থানায় গিয়ে বারবার বলেছি, আমার ছেলে শাহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার ছেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যেখানে ফিল্ড ওয়ার্ক করেছিল তার সিসিটিভি ফুটেজও দিয়েছি।
শাহীনুর রহমান শাহীন ঘটনায় জড়িত নয় বলে বাদীও বলেছেন; কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নির্দোষ হয়েও আমার ছেলে শাহীন জেল খাটছেন। তার সম্ভাবনাময় জীবনটা নষ্ট হতে চলেছে।
অন্যদিকে জেলে বন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র শাহীনুর রহমান শাহীনের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান স্বপন বলেন, প্রকৃত আসামি শাহীনের বদলে নির্দোষ শাহীন জেল খাটছেন কোনো অপরাধ না করেই। আমরা আদালতকে সব প্রমাণ দিয়েছি। কিন্তু আদালত চাইছে পুলিশ এ বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দিলেই শাহীনের জামিন হবে।
কিন্তু পুলিশ এখনও সেই কাজটি করেনি বলে শাহীনকে আদালত জামিন মঞ্জুর করেনি।
এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আরএমপির চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মুনীর যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি এ থানায় ছিলেন না, যা কিছু ঘটেছে তা আগের ওসির আমলেই ঘটেছে। এরই মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও বদল হয়েছে। মামলাটির তদন্তকাজ চলছে ও মূল আসামি সুজন, শাহীনসহ ৯ পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন