বগুড়ার শাজাহানপুরে টাকা ছাড়া মিলছে না বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। আবার অনেকে টাকা দিয়েও পাচ্ছে না ভাতার কার্ড। উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে উপযুক্ত ব্যক্তিরাই ভাতার কার্ড পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকলেও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীন সুবিধাভোগী নির্বাচনে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিজেরাই মাঠে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নে সুবিধাভোগী নির্বাচনে যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু ও নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীন সশরিরে উপস্থিত থেকে যাচাই-বাছাই করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নের ৮২ জন বয়স্ক, ৬৫ জন বিধবা ও ১১০ জন প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেতে হাজির হন সহস্রাধিক বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ। উপজেলা প্রশাসন নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাচাই-বাছাই করে মোট ২৫৭ জন সুবিধাভোগী নির্বাচনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এ সময় যাচাই-বাছাইয়ে আসা মানুষের মাঝে শুরু হয় কানাঘুষা। বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। টাকা দেওয়ার পরও কার্ড না পাওয়ার অজানা আশঙ্কায় পড়েন দরিদ্র মানুষেরা।
জানা গেছে, ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে মোশারফ হোসেন নামে ইউনিয়ন পরিষদের এক দালাল চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে সলাপরামর্শ করে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা করে নিয়েছেন। পদ্মপাড়া গ্রামের সাহেনা বেওয়া, জোবেদা বেওয়া ও মাজেদা বেওয়াসহ অনেকে জানান, বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দেড় হাজার টাকা করে দিয়েছেন।
বামুনীয়া ফকিরপাড়া গ্রামের রূমা বেওয়া ও জরিনা বেওয়াসহ অনেকে জানান, বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যের কথায় ইউনিয়ন পরিষদের মোশারফ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে তিন হাজার টাকা করে দিয়েছেন। বামুনীয়া চাঁদবাড়িয়া গ্রামের মিরাজুল ইসলাম (১৮) নামে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী জানান, প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য মোশারফকে দেড় হাজার টাকা দিয়েছেন।
আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান জানান, টাকা নেওয়ার বিষয়টি তার জানা ছিল না। বৃহস্পতিবার যাচাই-বাছাইয়ের সময় তিনি জানতে পেরেছেন। মোশারফ হোসেন নামের লোকটি ঢাকা মন্ত্রণালয়ের বাবু নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে অতিরিক্ত কার্ড করে আনার কথা বলে নাকি টাকা নিয়েছেন। শুধু এই ইউনিয়ন থেকেই নয়, উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন থেকেও নাকি টাকা সংগ্রহ করেছেন। তবে মোশারফকে যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদেরকে দ্রুত টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নু জানান, উপযুক্ত ব্যক্তিরাই ভাতার কার্ড পাবেন। এখানে কোনো অনিয়ম করা হবে না এবং কাউকে অনিয়ম করতেও দেওয়া হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন