নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার গোটা ভারত। রাজধানী দিল্লির শাহিনবাগ থেকে কলকাতার পার্ক সার্কাস প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে। দক্ষিণ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে আন্দোলনের আঁচ স্তিমিত হয়নি। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ-আন্দোলন হলেও নিজেদের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরেনি বিজেপি সরকার।
উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে ফের নিজেদের অবস্থান জানালেন বিজেপির সদ্যসাবেক সভাপতি ও মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আন্দোলনকারীদের হঁশিয়ার করে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘আপনারা যত খুশি আন্দোলন করুন সিএএ থেকে এক পা পিছু হটব না।’
টানা বিক্ষোভ-আন্দোলন সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্ণৌনর রামকথা পার্কে সিএএ-র সমর্থনে আয়োজিত বিশাল জনসভা থেকে বিক্ষোভকারীদের এমন হুঙ্কার দিলেন অমিত শাহ। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তার স্পষ্টবার্তা, কোনো অবস্থাতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রত্যাহার করা হবে না।
তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘সিএএ নিয়ে সহিংসতায় বিরোধীরা ইন্ধন দিচ্ছেন। মোদি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রণয়ন করেছেন। কিন্তু তার বিরোধিতায় মমতা, কেজরিওয়াল, রাহুল, মায়াবতীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন ৷ তারা ভোট ব্যাংকের রাজনীতিতেই আটকে রয়েছেন ৷ এই আইনের প্রয়োজনীয়তা তারা বুঝছেন না।’
বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অমিত শাহ আরও বলেন, ‘পাকিস্তানে অনেক সংঘ্যালঘুকে হত্যা করা হচ্ছে ৷ সংখ্যালঘু হত্যায় বিরোধীরা সোচ্চার কোথায়। ভোটবাংকের জন্য তারা অন্ধ৷ দলিত বাঙালির নাগরিকত্বে বিরোধিতা করছেন মমতা। বিরোধিতা করাই বিরোধীদের অভ্যাস।’
অমিত শাহ’র বলেন, ‘সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল তাদের হজম হয়নি ৷ ভারতকে টুকরো করার আওয়াজ উঠছে। অখিলেশ-লালু বিজেপি বিরোধিতা করুন।’ শুধু বিরোধী দল নয় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে অমিত শাহ’র হুঁশিয়ারি, ‘ভারত বিরোধিতা করবেন না। দেশবিরোধী কথা বললেই জেল হবে।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, আগামী ফেব্রয়ারিতেই হবে সিএএ বিধি প্রণয়ন করা হবে। বিজেপি নেতারা দলের নেতাকর্মীদের আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ৫ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সমর্থন পেতে ঘরে ঘরে যাবে বিজেপি। রাজ্যে ৫০ লাখ উদ্ধাস্তু ও শরণার্থী পরিবারের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা তাদের।
নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে উদ্বাস্তু ও শরণার্থীরা কীভাবে নাগরিকত্ব পাবেন, কার কাছে আবেদন করতে হবেম কোনো নথি আদৌ লাগবে কিনা-এসব তথ্য নিয়েই তৈরি হচ্ছে নাগরিকত্ব বিধি। আগামী মাসে এই বিধিমালা প্রকাশ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ শিগগিরই নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
তাই এমন সময়ে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। দেশজুড়ে ১ কোটি পরিবার ও ৩ কোটি মানুষের ঘরে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দলটি। এছাড়া দিল্লিসহ আরও কিছু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে এ বছর। সব মিলিয়ে বিশাল পরিকল্পনা নিয়েই সিএএ বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছে বিজেপি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন