সিরাজগঞ্জে এসিল্যান্ডের ভিন্নরকম ‘ডাবল সেঞ্চুরি’
সিরাজগঞ্জে দায়িত্ব পালনের গত ২২ মাসে ২০৩টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনিসুর রহমান। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম বাল্যবিয়ে বন্ধ। তার এ অর্জন ইতিবাচকভাবে দেখছে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এজন্য ২০১৯ সালের ২৩ জুন আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস দিবসে সদরের এই সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বাল্যবিয়ে বন্ধে অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন সাবেক জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
আনিসুর রহমান যেখানেই দায়িত্বে ছিলেন সেখানেই নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন।
গত ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার ভেজাল বিরোধী অভিযানে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে সাড়া পড়ে যায়। এজন্য যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে এখনো ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের প্রশংসা শোনা যায়।
গত ২০১৭ সালের শেষ দিকে বদলী হয়ে যমুনা নদীবিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায়। তিনি সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর এখানে অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন তিনি। দুটি ইলিশ প্রজনন মৌসুমে তিনি নিয়মভঙ্গকারী ১২৪ জন জেলেকে কারাদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়া এ বছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে সিরাজগঞ্জ সদরে ১১৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে ইলিশ রক্ষায় অবদান রাখেন। যা এখনো চৌহালীবাসীর মুখে মুখে।
চৌহালী উপজেলা থেকে সকল পাবলিক পরীক্ষায় নকল একেবারে দূর করেছিলেন। শুধু তাই নয় চৌহালী উপজেলায় কর্মকালীন ৩৩ সপ্তাহে ৩৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। এরপর বদলি হয়ে আসেন সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে।
এখানে সাড়ে ১২ মাসে ১৬৯ টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। ইতোমধ্যে একদিনে সাতটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে অনবদ্য রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এরমধ্যে পৌরসভায় ৩২টি, ইউনিয়ন পর্যায়ে খোকশাবাড়ীতে ১১টি, সয়দাবাদে ১৬টি, কালিয়া হরিপুরে ১৯টি, বাগবাটিতে ২৬টি, রতনকান্দিতে ২৯টি, বহুলীতে ১৩টি, শিয়ালকোলে ১০টি, ছোনগাছায় ১০টি, কাওয়াখোলায় ০৩টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়।
এদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ০৪ জন, ৪র্থ শ্রেণির ০২ জন, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ০৬ জন, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ১০ জন, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ২১ জন, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ৫৮ জন, নবম শ্রেণির ছাত্রী ৩৭ জন, দশম শ্রেণির ছাত্রী ২৭ জন, একাদশ শ্রেণির ০৪ জন।
সিরাজগঞ্জ সদরে ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে ০২ টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ০২ টি, মার্চ মাসে ১০ টি, এপ্রিল মাসে ২২ টি, মে মাসে ০৮ টি, জুন মাসে ১৫ টি, জুলাই মাসে ১৭ টি, আগস্ট মাসে ২৭ টি, সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ টি, অক্টোবর মাসে ১৭ টি, নভেম্বর মাসে ১৬ টি, ডিসেম্বর মাসে ০৫ টি এবং জানুয়ারি' ২০২০ মাসে ০৫ টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন এসিল্যান্ড আনিসুর রহমান।
এসময়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে সদর উপজেলায় বার লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ০৬ (ছয়) জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বর ও কনের বাবার মুচলেকা নেয়া হয়। তিনি চৌহালী উপজেলায় ৩৪টি ও সদর উপজেলায় ১৬৯টি সহ মোট ২০৩টি বাল্যবিয়ে নিজে উপস্থিত হয়ে বন্ধ করেছেন।
বাল্যবিয়ে বন্ধে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মা-বাবাদের বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ সদরের প্রায় সকল উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, মাদক ও জুয়া সম্পর্কে সচেতন করেন এবং সামাজিক এ ব্যাধিগুলো দূর করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা চান।
এছাড়া বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া অসহায় গরীব ৩ ছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন