বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পেছনে জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবি বিশেষ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিল। ছয় দফা দাবিতে সাধারণ মানুষকে জাগ্রত করার জন্য বঙ্গবন্ধু সিলেটে একাধিক পথসভা করেন। বিশেষ করে ৭০ দশকে নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা জকিগঞ্জে সমাবেশ করেন তিনি।
জকিগঞ্জ কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধু— এমন খবর কয়েকদিন আগে থেকে প্রচার হওয়ার পর পরই বিভিন্ন দল থেকে স্থানীয় কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিক আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সমাবেশ শুরুর আগে সদ্য যোগদানকারী নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন এমসি কলেজে ৭০ দশকের ছাত্রলীগের সাংগঠনকি সম্পাদক ও বর্তমানে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।
জকিগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সেই সফরের স্মৃতিচারণ করে মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘৭০ দশকেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। একটা স্বাধীন দেশকে আবারও স্বাধীন করা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু সেই অসম্ভব কাজকে সহজ করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনা। চলাফেরা ও কথাবার্তায় অত্যন্ত চৌকশ ছিলেন তিনি। খুব সহজেই যেকোনও বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারতেন । ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে কীভাবে আন্দোলন জোরদার করা সম্ভব, সেই কৌশলও তিনি সমাবেশে বলে দিয়েছিলেন। এককথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ছয় দফা দাবি স্বাধীনতার অন্যতম রোডম্যাপ।
মাসুক উদ্দিন আহমদ
বঙ্গবন্ধু কত বড় মাপের নেতা ছিলেন, কেউ সরাসরি তাকে না দেখলে সেটা বিশ্বাস করা সম্ভব নয়, জানিয়ে মাসুক উদ্দিন বলেন, ‘যে পথ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিপ গাড়ি যাবে সেই পথেই ছিল সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন। বঙ্গবন্ধুকে এক পলক দেখার জন্য সাধারণ মানুষের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করাই বলে দেয় যে, বঙ্গবন্ধু কত বড় নেতা। মানুষের মধ্যে যতই ক্লান্তি থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধুকে দেখার পর সেই ক্লান্তি কেটে যেত । জকিগঞ্জের সমাবেশে যোগদানের জন্য তিনি যখন সিলেট থেকে যাত্রা শুরু করেন, তখন পথে কয়েকটা বাজারে খুব অল্পসময়ে ছয় দফা দাবি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা তোফায়েল আহমদসহ কয়েকজন।
জকিগঞ্জ কলেজ মাঠের সমাবেশে যোগদানের আগে তিনি সায়বাগ মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। ওই সময় স্থানীয়রা বঙ্গবন্ধুর কাছে মসজিদ উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চাইলে তিনি তাদেরকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে মসজিদ উন্নয়নের জন্য একটি চেক পাঠানো হয়। তবে ততদিনে জাতির জনক আর জীবিত নেই।’
সমাবেশের স্মৃতি চারণ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘জকিগঞ্জের কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শোনার জন্য সকাল থেকে প্রায় ১০-১২ হাজার মানুষের সমাগম হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় বঙ্গবন্ধু সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে বিলম্ব হলেও মানুষের মধ্যে কোনও ক্লাতি ছিল না। ওই সময় আমরা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। নেতার বক্তব্য শোনার জন্য মঞ্চের কাছেই ছিলাম। অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। যে বক্তব্য শুনে মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিল। মূলত ওই সমাবেশে ছয় দফা দাবি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করেছিলেন তিনি। এছাড়া, নির্যাতন-নিপীড়নের কথা তুলে ধরেছিলেন। পুরো সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ৩২ মিনিটের মতো বক্তব্য রাখেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবিই ছিল মানুষের মনের দাবি। সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আগে যারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন, তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর বঙ্গবন্ধু নৌকায় ভোট চেয়ে ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল লতিফ (এক থানার প্রার্থী) এবং এমএএলএলবিজেডি দলের প্রার্থী আব্দুর রহিম (তিন থানার প্রার্থী)-কে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৬৯ আসনের মধ্যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন