যশোর জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানভুক্ত আসামি বহুল আলোচিত জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন গ্রেফতার হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাকে রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করবে পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতারের পর সোমবার যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুবাই থেকে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে দেশে ফেরার পথে গ্রেফতার হন তিনি।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জাহিদ হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে আদালতের তিনটি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধে তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টাসে ছিল। তিনি দুবাই থাকেন এবং প্রায়ই দেশে আসেন, এমন তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
রোববার সন্ধ্যায় দুবাই থেকে ফেরার পথে ইমিগ্রেশন পুলিশ মিলনকে গ্রেফতার করে আমাদেরকে অবহিত করে। সোমবার যশোর ডিবি পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুটি মামলায় তার রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
এদিকে, যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, যশোর শহরের পুরাতন কসবার রোস্তম আলীর ছেলে জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনের (৪৭) বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরক আইনে অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- কোতয়ালী থানার মামলা নম্বর ৪৪ তারিখ ২৭/১০/২০১৯, মামলা নম্বর ১১০ তারিখ ২৯/০৯/২০১৯, মামলা নম্বর ৯৫ তারিখ ১৯/০৮/২০১৭, মামলা নম্বর ১১৩ তারিখ ২৬/০৮/২০১৯, মামলা নম্বর ৪৮ তারিখ ০৮/০৪/২০১২, মামলা নম্বর ১২২ তারিখ ২২/০৬/২০০৬, মামলা নম্বর-৬০ তারিখ ১৬/০৪/২০০৬, মামলা নম্বর-০৩ তারিখ ১৪/০৪/২০০৬, মামলা নম্বর-১৮ তারিখ ০৫/০৪/২০০৬, মামলা নম্বর ১১১, তারিখ ০৫/০৪/২০০৫।
এছাড়াও তিনটি মামলায় আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। যার নম্বর যথাক্রমে এসটিসি-২৬৩/১৫, এসটিসি-২২৫/১৬, এসটিসি-২৪৮/১৭।
২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার যুবলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন। এই মামলায় আটক এক আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে টাক মিলনের নাম এসেছে। এই মামলার সন্ধিগ্ধ আসামি তিনি।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত টাক মিলন। তার নেতৃত্বেই এই হামলা চালানো হয়েছিল বলেই পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই দুটি মামলায় আদালতে রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ইজিবাইক, ট্রাকে ব্যাপক চাঁদাবাজি, এলাকার মানুষের কাছে চাঁদাবাজিতে জিম্মি হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। এছাড়াও পালবাড়ির রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো (জুয়া) ব্যবসা পরিচালনা করছিল।
সারাদেশে ক্যাসিনো-বিরোধী ও শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে গা ঢাকা দেয় টাক মিলন। পুলিশ একাধিকার অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি। তিনি প্রভাবশালী নেতার গাড়ি ও বাড়িতে থাকতেন। বাইরে বের হতেন না। সর্বশেষ তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে দুবাইয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। সেখান থেকে মাঝে মাঝে দেশে আসতেন। এই তথ্য পুলিশের কাছে আসলে ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন