পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া রাজশাহীর বাঘার সেই ভ্যানচালকের মেধাবী ছেলে ও কোরআনে হাফেজ নূরনবী চাঁদ মানিককে ৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা।
শুক্রবার ‘৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সেই হাফেজকে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিলেন ইউএনও!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অনেকেই বলছেন, কোরআনে হাফেজ না হলে হয়তো আরও অনেক বেশি টাকা দেয়া হতো তাকে। এই পরিমাণ টাকা দিয়ে মেধাবী ছাত্র মানিককে ‘উপহাস’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের।
ফিরোজ আহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিলেন? তাও আবার একজন ইউএনও। এটা আবার ফটোশুট করে মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে, লজ্জা না থাকলে যা হয়। একজন মেধাবী ছাত্রের সঙ্গে এমন উপহাস না করলেও পারতেন।’
নাসিম শিকদার লিখেছেন, প্রয়োজনীয় জায়গায় টাকা দেবে না এরা! যাত্রাপালা অথবা অকাজের জায়গায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমিনুল ইসলাম মুকুল লিখেছেন, গানের শিল্পী হলে তখন ৫ লাখ টাকা কোনো ব্যাপারই ছিল না।
মামুনুর মনির লিখেছেন, বিষয়টি সত্যিই লজ্জাকর। আমরা আসলে ভালো মানুষকে মূল্যায়ন করতে জানি না।’
মো. ইমরান লিখেছেন, ‘হাফেজ না হলে মনে হয় একটু বেশি পেত।’
শরীফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, পোজ দেখে তো মনে হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকার চেক দিচ্ছে। এভাবে উপহাস করার কোনো মানেই হয় না।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এক বাংলাদেশি প্রবাসী লিখেছেন, ‘আমি দশ হাজার টাকা দেব, নম্বর পাঠিয়ে দেন।’
তবে মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘কে কি দিল এটা দেখার বিষয় নয়। আসুন আমরা সবাই মিলে তাদের চেয়ে বেশি দেয়ার চেষ্টা করি।
প্রসঙ্গত, বাঘা উপজেলার উত্তর গাঁওপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক আসমত আলীর ছেলে নূরনবী চাঁদ মানিক। সংসারের অসচ্ছলতার জন্য মাঝে মধ্যে বাবার সঙ্গে ভ্যান চালালেও মনোবল না হারিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন।
নূরনবী চাঁদ মানিক ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সি-ইউনিটে, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-ইউনিটে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ডি-ইউনিটে, পাবনার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ-ইউনিটে এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পান।
কিন্তু ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও কার লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে যুগান্তরে খবর প্রকাশ হয়।
তারপর বিষয়টি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। পরে তার নির্দেশে ১২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৫ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেন।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে ধার করে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন মানিক। ভর্তি হতে তার সাড়ে ৬ হাজার টাকা লেগেছে।
তবে ভর্তির পর ছেলের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বাবা আসমত আলী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন