রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্স এখন বহিরাগতদের দখলে। ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরা এখানে না থেকে সাবলেট দিয়ে দিয়েছেন। আর মপ্লেক্স বাউন্ডারির ভেতরে সবুজায়নের জন্য সংরক্ষিত ফাঁকা জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তুলে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন কমপ্লেক্স রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীরা। এভাবেই মিলেমিশে ভাড়া বাণিজ্য চালানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে একদিকে যেমন ফ্ল্যাটগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে যাচ্ছেতাইভাবে অন্যদিকে কমপ্লেক্সের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে চরমভাবে।
এদের উচ্ছেদ করার জন্য গণপূর্ত সচিবের কাছে সংসদ সচিবালয় থেকে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর এবং পরে ২০১৯ সালের ৬ মে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে অবহিত করেননি। এজন্য বিষয়টি জানিয়ে ভেতরে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে আবার নতুন করে চিঠি দিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে এ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। এখানে মোট ৪৪৮টি ফ্ল্যাট আছে। গত ৫ আগস্ট স্পিকার চিফ হুইপ এবং অন্যান্য হুইপদের নিয়ে এ কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এর ভেতরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ নানা অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিদর্শনে তারা দেখতে পান, বরাদ্দ নিয়েও এ কমপ্লেক্সে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন না। অনেক ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছে সাবলেটে। কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে সবুজায়নের জন্য রাখা জায়গা দখল করে নিজেরা থাকা ছাড়াও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীরা ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছেন।
এদিকে ৪৪৮টি ফ্ল্যাটের অপব্যবহার প্রশ্নের মুখেও সংসদ সচিবালয়ে কর্মরতদের জন্য নতুন করে আরো ৫শ’ ফ্ল্যাট বরাদ্দ চেয়েছে জাতীয় সংসদ। সচিব, যুগ্ম সচিব হোস্টেলে বসবাসরত ৩০ কর্মকর্তাসহ যারা এখনো বাসা পায়নি তাদের জন্য এ ফ্ল্যাট চাওয়া হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ই-টাইপের ৫০, ডি-১ টাইপের ৫০ এবং পর্যায়ক্রমে আরো ৪০০টি ফ্ল্যাটসহ নতুন ৫০০ ফ্ল্যাট চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে দেয়া চিঠিতে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও লালমাটিয়ায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নির্মাণাধীন ভবনগুলো বরাদ্দের কথা বলা হয়।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ ভবন এলাকায় ৩০টি ফ্ল্যাটে বসবাসরত কর্মকর্তাদের বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংসদে ভিআইপির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাসাগুলো তাদের অফিস হিসেবে বরাদ্দ দেয়ার জন্য এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের বাসা ছাড়ার চিঠিতে বলা হয়, ‘ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে মন্ত্রীর পরিবর্তে সংসদ সদস্য সভাপতি। এতে ভিআইপির সংখ্যা আগের তুলনায় ৫০-৬০ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সংসদ ভবনে অফিস কক্ষের সংখ্যা একই রয়েছে। অফিস কক্ষের সঙ্কট থাকায় ভিআইপি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
এতে আরো বলা হয়, ‘বর্তমানে সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে মন্ত্রী হোস্টেলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও কয়েকজন মন্ত্রীর অফিস রয়েছে। কাজের গতিশীলতা আনার জন্য তাদের সংসদ ভবনে অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া সচিব/যুগ্ম-সচিব হোস্টেলে ই-টাইপ ও ডি-টাইপের ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বরাদ্দপ্রাপ্ত হয়ে বসবাস করছেন। তাদের অন্যত্র আবাসন সুবিধা দিয়ে স্থানান্তর করে সেখানে অফিস স্থাপন করা অতি জরুরি।’
সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের জন্য ৫০০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ চেয়ে দেয়া পৃথক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় তিনগুণের বেশি বেড়েছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জনবলের তুলনায় বিভিন্ন শ্রেণির বাসার সংখ্যা খুবই কম। সংসদের অধিবেশন চলাকালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে করতে হয়। অফিস শেষে ভাড়া বাসায় ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ অবস্থায় আবাসন সঙ্কট সমাধানে আবাসন পরিদফতরের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের জন্য ডি শ্রেণির ২৫০টি, সি শ্রেণির ১৫০টি ও বি শ্রেণির ১০০টিসহ মোট ৫০০টি নতুন ফ্ল্যাটের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ৫০০টি বাসা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এ চিঠি দেয়া হয় বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন