ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ (ডানে)।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সহযোগীদের মাছ কাটার বটি দিয়ে এক গৃহবধূর চুল কেটে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ মামলাও করেছেন।
গত ২৫ নভেম্বরের ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- গজাইল গ্রামের মুনসুর (৩৮), আব্দুস সালাম (৪৫), নাসির উদ্দিন(৪০) ও শহিদুল ইসলাম(৩২)।
মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামিদের একের পর এক হুমকিতে ভয় পেয়ে ওই গৃহবধূ পার্শ্ববর্তী গ্রামে বাবার বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার এড়াতে ওই আওয়ামী লীগ লীগ নেতা ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
নির্যাতিতা গৃহবধূ জানান, ঘটনার দিন এক আত্মীয়র বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের খোঁজে বের হই। পথিমধ্যে সাইফুল ইসলামের বাড়ির পাশে যেতেই আমাকে অতর্কিত ভাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ ও তার ৪ সহযোগী আমার পথরোধ করে। এরপর সাইফুল ইসলামের সাথে আমাকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেছে বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় গ্রামের লোকজন ছুটে এলে তাদের সামনে আমাকে মারপিট করে শ্লীলতাহানি করে। এরপর শত শত লোকের সামনে মাছ কাটার বটি দিয়ে আমার মাথার চুল কেটে দেয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পরেও তারা শরিফ নামে এক সেলুন শ্রমিকের গিয়ে তারা আমার মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার জন্য খুর-কাঁচি চায়। কিন্তু ওই সেলুন শ্রমিক তাদের খুর-কাঁচি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকেও তারা মারধর করে। সেলুন শ্রমিক শরিফ দেশ রূপান্তরের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা আমাকে অন্যায় ভাবে মারপিট করেছে।
নির্যাতিতা গৃহবধূ আরও জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নানা ভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে আমি রাজি না হওয়ায় এবং আমার বাড়ির ডিস সংযোগ লাইন তিনি বারবার কেটে দিতেন।
তিনি বলেন, আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে মাথার চুল কেটে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি এবং ভেঙে পড়েছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না। এমনকি সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। লজ্জা ও ঘৃণায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। ফলে এক রকম নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, এখন মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এভাবে বর্বরোচিত ভাবে প্রকাশ্য জনসম্মুখে চুল কেটে দেয়া আইনত অপরাধ। এর জন্য তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।
গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও ইউনুস আলী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দলীয় প্রভাব বিস্তার করে এর আগেও নিরপরাধ এক স্কুল শিক্ষকসহ এলাকার অনেককেই মারধর করেছেন। এ সবের বিচার না হওয়ায় তিনি এখন চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ বলেন, ওই গৃহবধূর চুল আমি কাটি নি। অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার সময় গ্রামবাসী তাকে হাতেনাতে আটক করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। স্থানীয় একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এ ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে ওই গৃহবধূকে দিয়ে আমার নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লাপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীন শাহ পারভেজ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিরা পলাতক। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলাটি উল্লাপাড়া মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. হাফিজ তদন্ত করছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন