প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত (ফার্স্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্যতম একটি হচ্ছে- ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’। বিধি অনুযায়ী, জমি অধিগ্রহণপরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের তহবিল ছাড়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণেই ব্যয় হয়ে গেছে তিন বছর। সম্প্রতি অর্থছাড় করা হলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে আটকে আছে প্রকল্পটির কাজ। অথচ ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে জমির দাম। শুধু তাই নয়, প্রকল্প সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ায় পুরো প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাবে; রাষ্ট্র আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজে অবতরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এদিকে বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে পৃথক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের সেতুর ওপারে পুনর্বাসন করা হবে। এ কারণে সেখানে নির্মাণ করা হবে ১৩৯টি আবাসিক ভবন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় থমকে আছে বিমানবন্দর প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের কাজ। দুই মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার মধ্যে দায়িত্বে অবহেলা এবং তা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নও অনাকাক্সিক্ষতভাবে পিছিয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে গত ২৮ নভেম্বর জমির মালিকদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্থানীয় প্রশাসনসহ কয়েকটি সংস্থার বৈঠক হয়েছে। ফলপ্রসূ এ বৈঠকের পর আশা করা যাচ্ছে, জমি অধিগ্রহণ জটিলতাসহ যাবতীয় সমস্যা অচিরেই কেটে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখের একটি চিঠিতে প্রকল্প হতে ব্যয় নির্বাহের জন্য কাজটি সংশোধিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একনেকের অনুমোদন অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণে এলজিইডি সময় মোতাবেক অর্থ দাবি না করায় এ বিষয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। প্রকল্প হতে এ কাজের ব্যয় নির্বাহের নির্দেশনা প্রদান করলেও সিএএবির নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ প্রদানের কোনো নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি। এলজিইডি ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রায় তিন বছর বিলম্ব, প্রকল্পের বিপরীতে সরকারি অর্থছাড়ের প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ (বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জিও জারিতে এক মাস ও এজি কর্তৃক অর্থছাড়ে প্রায় এক মাস অর্থাৎ সর্বমোট প্রায় দুই মাস বিলম্ব হয়) নানা কারণে এলজিইডিকে সরকারি তহবিল থেকে সময়মতো অর্থ প্রদান করতে পারেনি সিএএবি।
ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর ওপর ব্রিজ ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে প্রত্যাশিত সংস্থা হিসেবে এলজিইডি ভূমি অধিগ্রহণের উদ্দেশে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ২০১৬ সালে একটি প্রস্তাব পাঠায়। মন্ত্রণালয় সে বছরই এলজিইডির অনুকূলে প্রশাসনিক অনুমোদন জারি করে। ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয় তিন বছরেও ভূমি অধিগ্রহণ করেনি। এমনকি এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগও নেয়নি। প্রায় তিন বছর পর গত ২৮ মার্চ এলজিইডির পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে ৬৯ কোটি ২৮ লাখ ৭২ হাজার টাকার তহবিল চাহিদা প্রেরণ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হওয়ার পর সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ গত ৭ এপ্রিল তহবিল ছাড়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল ছাড়ের জিও জারি করা হয়। অর্থাৎ জিও জারিতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সময় লাগে প্রায় এক মাস। জিও জারির পর ২০১৯ সালের ১২ মে সিএএবি থেকে এজিতে তহবিল উত্তোলনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২ জুন এজি থেকে সিএএবির কেন্দ্রীয় হিসাবে তহবিল স্থানান্তর হয়। পরে সিভিল এভিয়েশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ২০১৯ সালের ২৭ জুন এলজিইডির কাছে চেক প্রেরণ করেন। সব মিলিয়ে তহবিল ছাড়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৩০ দিন, এজি ২০ দিন ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ১৫ দিন সময়ক্ষেপণ করেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন ও এলজিইডি সময়ক্ষেপণ করে তিন বছর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন