যৌন নির্যাতন সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হন ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নারী। পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বনগাঁও গ্রামে। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
গত ২৬ নভেম্বর এই নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। দুই দিন পর (২৮ নভেম্বর) শ্রীমঙ্গলের মুক্তি মেডিকেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অর্থের অভাবে ভালোভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে ১ ডিসেম্বর রবিবার বিকালে ছাড়পত্র না নিয়েই বাড়ি চলে যান তার পরিবারের সদস্যরা।
মুক্তি মেডিকেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের সেবক পংকজ তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ ও প্রধান সেবিকা দীপ্তি দেব ওই নারীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তির সময়ই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।’
তবে চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ ও প্রধান সেবিকা দীপ্তি দেব বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ওই নারীর দেহে যৌন নির্যাতনসহ পোড়া ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ক্ষতগুলো সারতে একটু সময় লাগবে। শারীরিক নির্যাতনে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে মানসিক চিকিৎসাও দেওয়া প্রয়োজন।
নির্যাতিত নারীর স্বামী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘সরকারের সহায়তায় গত ২৬ নভেম্বর আমার স্ত্রী দেশে ফিরে এসেছে। বাড়ি ফেরার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছে আধমরা হয়ে। টাকা রোজগারের আশায় গেল, একটি টাকাও দেশে পাঠাতে পারেনি। এখন প্রাণ নিয়েই টানাটানি।’
তিনি আরও জানান, ‘গত বছর আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের ৭-৮ মাস পর স্থানীয় দালাল মোস্তফা কামালের প্রলোভনে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবে পাড়ি দেয় আমার স্ত্রী। নেওয়ার সময় দালাল বলেছিল গৃহকর্মীর কাজের ভিসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবের দাম্মামে পৌঁছানোর পর একপর্যায়ে আমার স্ত্রী জানতে পারে ৩-৪ লাখ টাকায় তাকে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। যৌনকর্মীর কাজে রাজি না হলে তার ওপর চালানো হয় নানাভাবে নির্যাতন। তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে প্রতিদিন চালানো হতো যৌন নির্যাতন। জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে শরীরে ছ্যাঁকা দিয়েছে। পিটিয়ে হাত-পা ও উরু জখম করেছে। প্রতিদিন দলবেঁধে ৪/৫ জন মিলে ধর্ষণ করেছে। নির্যাতনের সময় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো। একপর্যায়ে সৌদি আরবের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদম ব্যবসায়ী মোস্তফাকে বিষয়টি জানালে সে মিথ্যা কথা বলে উড়িয়ে দেয়। পরে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সরকারের চেষ্টায় ছয় মাস ২৬ দিন পর দেশে ফেরে আমার স্ত্রী। আমি বাঁশের কাজ করি, অভাব-অনটনে সংসার চলছিল। দালাল মোস্তফা তখন আমার স্ত্রীকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। প্রথমে রাজি না হলে পরে অন্যান্য দালাল দিয়ে বহু টাকা আয়ের লোভ দেখায়। মোস্তফা জানায়, নিজের মেয়ে পরিচয়ে বিদেশে পাঠাবে, সেখানে সে যত্নে থাকবে, পাসপোর্ট-ভিসা সব করে দেওয়া হবে, কোনও টাকা লাগবে না। একপর্যায়ে এসব প্রলোভনে রাজি হই। বিদেশ যাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন যোগাযোগ করে। পরে আমার স্ত্রী আর যোগাযোগ করতে পারেনি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে দালাল মোস্তফা কামালের বাড়িতে গেলে তার পরিবার জানায় সে বাড়িতে নেই। মোস্তফার ফোন নম্বরও দিতে অস্বীকৃতি জানায় তারা।
ওই নারীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বারবার দালাল মোস্তফা কামালের কাছে আমার মেয়ের খবর নিতে গিয়েছি। মোস্তফা বলেছে আমার মেয়ে সৌদি আরবে কারাগারে আছে।’
কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই নারীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মামলা করার পরিকল্পনা চলছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন